Sunday, June 4, 2023
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামআবারও মর্মান্তিক দুর্ঘটনা

আবারও মর্মান্তিক দুর্ঘটনা

দেশের বেশির ভাগ লেভেল ক্রসিং অরক্ষিত। যেসব লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যান ও প্রতিবন্ধক আছে, সেগুলোয়ও সংশ্লিষ্টদের অবহেলা ও অসতর্কতার কারণে কিছুদিন পরপরই দুর্ঘটনা ঘটছে। শুক্রবার চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে খৈয়াছড়া ঝরনা লেভেল ক্রসিংয়ের ভয়াবহ ও মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতার বিষয়টি আবারও স্পষ্ট হলো। মীরসরাইয়ে পর্যটকবাহী মাইক্রোবাসটি লেভেল ক্রসিংয়ে উঠে পড়ায় ট্রেনের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই ১১ জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ছয়জন, যাদের পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। জানা যায়, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতী ট্রেনটি দুপুর দেড়টার দিকে ওই লেভেল ক্রসিং পার হওয়ার সময় মাইক্রোবাসটি রেললাইনে উঠে পড়ে। ট্রেনটি মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দিলে তা ট্রেনের ইঞ্জিনের সঙ্গে আটকে যায়। ওই অবস্থায় প্রায় পৌনে এক কিলোমিটার দূরে গিয়ে থামে ট্রেনটি। ঘটনার সময় লেভেল ক্রসিংয়ের বাঁশ (বার) নামানো ছিল কি না, দায়িত্বরত গেটম্যান সেখানে উপস্থিত ছিলেন কি না-এসব নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। মাইক্রোবাসের চালক কতটা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়। ইতোমধ্যে এ ঘটনার তদন্তে পৃথক দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

যে কোনো দুর্ঘটনায় একজন মানুষের হতাহত হওয়ার সঙ্গে বহু মানুষের স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটে। প্রশ্ন হলো, আর কত মানুষ হতাহত হলে অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংগুলো সুরক্ষিত করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে? লেভেল ক্রসিংয়ে ঘন ঘন দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে, পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হয়েছে। লক্ষ করা গেছে, কোনো একটি দুর্ঘটনার পরই কর্তৃপক্ষ অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসে। এরপর কি তাদের আর কোনো দায়িত্ব নেই? কয়েকদিন আগে গাজীপুরে একটি লেভেল ক্রসিংয়ে বাসের সঙ্গে ট্রেনের ধাক্কায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন; আহত হয়েছেন অনেকে। আহতদের দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, গতিরোধক নামানো না থাকায় বাসটি রেললাইনে উঠে পড়ে। এর কয়েকদিন আগে গোপালগঞ্জে রেললাইন পার হওয়ার সময় কয়েকজন শ্রমিক নিহত হন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো এ ব্যাপারে সমন্বিত পদক্ষেপ না নিলে এ ধরনের ভয়াবহ ও মর্মান্তিক দুর্ঘটনা রোধ করা কঠিন হয়ে পড়বে।

আমরা দেখেছি, প্রতিটি রেল দুর্ঘটনার পর এক বা একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত শেষে কমিটি রিপোর্ট জমা দেয়। কিন্তু রিপোর্টের সুপারিশ অনুযায়ী নেওয়া হয় না কোনো কার্যকর পদক্ষেপ। অভিযোগ আছে, এ নিয়েও চলে অবৈধ বাণিজ্য। কমিটি যাদের দায়ী করে, তাদের অনেকে ঊর্ধ্বতন অসাধু কর্মকর্তার কাছে ছুটে গিয়ে মোটা অঙ্কের ঘুস দিয়ে শাস্তি কমিয়ে আনেন। আরও অভিযোগ আছে, রেলের নিজস্ব লোকজন দিয়েই অধিকাংশ সময় গঠন করা হয় কমিটি, যাতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বাদ দিয়ে অন্যদের কাঁধে দায় চাপানো যায়। এ পরিস্থিতি বজায় রেখে রেল দুর্ঘটনা কমার আশা করা অর্থহীন। রেলকে তুলনামূলক নিরাপদ বাহন হিসাবে গণ্য করা হয়। কিন্তু ঘন ঘন দুর্ঘটনা ঘটতে থাকলে রেলভ্রমণে মানুষের সেই নিরাপত্তাবোধে চির ধরবে। কাজেই দুর্ঘটনার কারণগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করে প্রতিকারের ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments