স্বঘোষিত পরাশক্তি ফকির ভারত এখন আফগানিস্তানে দিশেহারা হয়ে খুঁজছে সে কার খালু। আফগানিস্তান থেকে ভারতের কেবল লাথি খাওয়া বাকি আছে। মরহুম সোভিয়েট ইউনিয়নের সাবেক দালাল ভারতীয় হনুমানরা নব্য প্রভু আমেরিকার ওপর ভর করে আর্দালি পাইক-পেয়াদা হিসেবে আফগানিস্তানে প্রবেশ করে সে দেশে তাদের লেজ গাড়তে আদাপানি খেয়ে নামে।
বাইরে ঠিকাদারির কাজে নিয়োজিত থাকলেও তাদের মূল কাজ ছিল হনুমানি গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’এর শিকড় আফগানিস্তানে ছড়িয়ে দেয়া, সেই দেশে ভারত-মনষ্ক আবহ তৈরি করা, সর্বোপরি পাকিস্তান ও ইরানকে ভাঙতে ওই দুইদেশে, বিশেষত পাকিস্তানে, সন্ত্রাসী তৎপরতা চালিয়ে পাকিস্তানকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু, রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল, সামাজিকভাবে অশান্ত ও ভৌগোলিকভাবে ছিন্নভিন্ন করা। আফগানিস্তানকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে ভারত আফগান জনগণের মধ্যে প্রতিবেশী পাকিস্তান ও ইরানের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিদ্বেষের বীজ বপন করে। আফগানদেরকে বুঝানো হয়: প্রতিবেশী দুটি দেশের ভিতরেই আফগানিস্তানের ভূমি রয়েছে। সেগুলো উদ্ধার করতে হবে। অন্যদিকে এই দুটি দেশের অবিচ্ছেদ্য অংশকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য সন্ত্রাসী তৈরি করে। সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণ দেয়।
২০১৫ সালে ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবসে মোদি সাবেক খাইবার পাকতুনখা (সাবেক উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ) সিন্ধু ও বেলুচিস্তানকে পাকিস্তান হতে বিচ্ছিন্ন করতে বিচ্ছিন্নতাবাদীদেরকে সমর্থন দেয়ার এবং তাদেরকে ভারতে প্রশিক্ষণ দেয়ার প্রকাশ্য ঘোষণা দেন। ভারতের লক্ষ্য ছিল আফগানিস্তানে অবস্থান করে পাকিস্তানকে ভেঙে দেয়া, কমপক্ষে চারদিকে থেকে চেপে ধরা।
‘আমেরিকা আর কখনোই আফগানিস্তান থেকে সরে যাবে না’ Ñ এমন কল্পনায় বিভোর হয়েই ফকির ভারত আফগানিস্তানে স্থায়ী ঘাঁটি গড়ার উদ্যোগ নেয়। উদ্দেশ্য ছিল দেশটিকেও বাংলাদেশের মতোই ভারতানুগত দেশে পরিণত করা। সেখানে বসে আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর ছড়ি ঘোরানোর স্বপ্ন তাদেরকে পাগলপরা করে। ত্যাজী আফগানদের ইতিহাসকে আমলে নেয় নি।
আফগানদের প্রতিরোধের যে তাপ আমেরিকানদের গায়ে লেগেছিল, তা ভারতের গায়ে লাগে নি। কারণ নিরাপদ দূরত্বে বসে তারা ঠিকাদারির কাজ ও নিজেদের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক নিয়ে ব্যস্ত থাকে।
তাপ অনুভব করেই আমেরিকা আফগানিস্তান থেকে সরে আসার বিষয়টি সামনে আসে। এমন সম্ভাবনা দেখা দেয়ার পর থেকেই ফকির ভারতের মাথা চক্কর দিতে থাকে। ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা (২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২০) জানায়: মার্কিন বাহিনীর সরে যাওয়ার সম্ভাবনায় উদ্বিগ্ন ভারত। আফগানিস্তান হতে আমেরিকান সৈন্য সরে গেলে ভারতের জঘন্য উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার চক্রান্ত ভেস্তে যাবে তা বুঝে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক ভারত সফরের সময় মোদি ট্রাম্পের হাত-পা ধরেছিলেন ঘোষিত চুক্তি হতে সরে আসতে। নিদেনপক্ষে ভারতের স্বার্থ দেখতে যেন পাকিস্তান কোনভাবে সেখানে ঢুকতে না পারে।
ট্রাম্প মোদির অনুনয়-বিনয় উড়িয়ে দেন। দিল্লীতে তিনি সাংবাদিকদেরকে বলেন: “যুক্তরাষ্ট্র (কারো) পুলিশবাহিনী নয়। এবং আফগানরা নিজেরাই নিজেদেরকে পাহারা দেবে। যুক্তরাষ্ট্র চায় আমাদের যুবকদেরকে ঘরে ফিরিয়ে আনি।” ট্রাম্প দাবি করে বলেন: “আমেরিকা (আফগানিস্তানের এই যুদ্ধে) সহজে জয়লাভ করতে পারে”, কিন্তু “আমি লাখ লাখ মানুষ খুন করতে চাই না।”
(যঃঃঢ়ং://স.বপড়হড়সরপঃরসবং.পড়স/হবংি/ফবভবহপব/ঁং-ঃধষরনধহ-ঢ়বধপব-ফবধষ-ভড়ৎবরমহ-ংবপৎবঃধৎু-যধৎংয-ংযৎরহমষধ-ারংরঃং-ধভমযধহরংঃধহ/ধৎঃরপষবংযড়/ি৭৪৩৯২৩৪০.পসং)
বেশরম মোদির আবদার উপেক্ষা করে ২৯ ফেব্রুয়ারি দোহায় তালেবানদের সঙ্গে আমেরিকার শান্তি চুক্তি হয়। যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেয়ো এবং তালেবান নেতাদের উপস্থিতিতে আফগানিস্তান বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত জালমি খলিলজাদ ও তালেবান প্রতিনিধি মোল্লা আবদুল গণী বারদার এই চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। চুক্তির শর্তানুযায়ী আগামী ১৩৫ দিনের মধ্যে আফগানিস্তানে আমেরিকার সদস্য সংখ্যা ৮,৬০০ জনে কমিয়ে আনা হবে (বর্তমানে আফগানিস্তানে আমেরিকার ১৩ হাজারের বেশি সৈন্য রয়েছে )। আমেরিকার মিত্রবাহিনী, জোট ও সহযোগীরাও একই সময়ে তাদের নিজ নিজ বাহিনীর সংখ্যাও একইভাবে হ্রাস করবে। আমেরিকাসহ তার মিত্রবাহিনী, জোট ও সহযোগীদের কূটনীতিক মিশনের লোকজন ব্যতিত বাকী সামরিক বাহিনীর সদস্য, বেসামরিক লোকজন, নিরাপত্তা কাজে নিয়োজিত বেসরকারী ঠিকাদার, প্রশিক্ষক, উপদেষ্টা, অন্যান্য সেবাদানকারী সংস্থার ব্যক্তিবর্গের সবাই চুক্তি সাক্ষরের দিন হতে ১৪ মাসের মধ্যে আফগানিস্তান ত্যাগ করবেন। আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ কোন বিষয়ে আমেরিকা আর নাক গলাবে না। তালেবানগণ আফগানিস্তানে আল-কায়েদাসহ কোন সন্ত্রাসী সংগঠনকে আশ্রয় কিংবা প্রশ্রয় দিবে না। তালেবানরা স্বীকৃতি দেয় নি, আমেরিকার সহযোগিতায় ক্ষমতাসীন সরকারের সাথে আলোচনায় বসে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা গ্রহণ করবে।
মুসলিম বিদ্বেষী ভারতীয় আগ্রাসীরা কোনভাবে এই চুক্তি মেনে নিতে পারছে না। এরফলে না কী ভারতের স্বার্থ নিরাপত্তা বিপন্ন হবে। আনন্দবাজার পত্রিকা ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের বরাতে জানায় : “গোটা বিষয়টির সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া তথা ভারতের নিরাপত্তার প্রশ্নটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত।” ভারত বলতে চাইছে আফগানিস্থান থেকে ভারত লেজ গুটালে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো বিপদে পড়বে। মায়াকান্না কাকে বলে? দস্যু ভারতের এমন কুমিরী কান্নাকে প্রতিবেশি ফালতু যুক্তি বলে মনে করে। ভারতের প্রতিবেশিরা ভারতরকেই তাদের নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে জঘন্য হুমকি বলে মনে করে। তাই ভারত নামক এই সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের বিলীন হলেই প্রতিবেশি দেশগুলো বিপদমুক্ত হবে।
আর আফগানিস্তান ভারতের প্রতিবেশিও নয়। আফগানিস্তানের সাথে ভারতের কোন অভিন্ন সীমান্ত নেই। তাই আফগানিস্তানে এই দুষ্টুচক্র লাথি খেলে তার কিংবা তার প্রতিবেশিদের নিরাপত্তা বিঘিœত হবে কেন? বিঘিœত হবে পাকিস্তানসহ অন্যান্যদেশ, এমনকি আফগানিস্তানকে লুট এবং কব্জা করার সুদূরপ্রসারী ভারতীয় চক্রান্ত।
নিরাপত্তাগত স্বার্থের অজুহাতে বিশ্বাসঘাতক ভারত ১৯৭৫ সালে একেবারেই শান্তিপ্রিয় দেশ সিকিম দখল করে। তথাকথিত বন্ধু হয়েও বাংলাদেশেকে ভাগ করার জন্য ভারতীয় নাগরিক বাংলাভাষী হিন্দুদেরকে দিয়ে স্বাধীন বঙ্গভূমি ও হিন্দুল্যান্ড আন্দোলন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র চাকমা সন্ত্রাসীদেরকে দিয়ে স্বাধীন জুমল্যান্ড প্রতিষ্ঠা করতে ১৯৭৩ সাল থেকে চেষ্টা চালাচ্ছে, যা এখনো অব্যাহত আছে। শ্রীলংকাকে ভাগ করে পদানত এবং এক পর্যায়ে দখলের জন্য তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীকে ত্রিশ বছর গৃহযুদ্ধ চালায়। আবার তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীকে নির্মূল করার নামে ভারতীয় সশস্ত্রবাহিনীকে গ্রহণ করার জন্য শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট জয়বর্ধনেকে বাধ্য করা হয়। ১৯৮৭ সালের ২৯ জুলাই ভারতীয় সেনাবাহিনী ভারতের তৈরি তামিল গেরিলারাদেরকে নির্মূল করার নামে শ্রীলংকায় নামে। তামিল গেরিলারা ভারতকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে ধিকৃত করে। দীর্ঘ দিন অবস্থান করেও ভারতীয় সেনাবাহিনীর ভেড়াগুলো তামিলদের কিছ্ইু করতে পারে নি। অন্যদিকে শ্রীলংকান সেনাবাহিনী ভারতীয় আগ্রাসীদের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্দ হয়ে ওঠে। পরবর্তী প্রেসিডেন্ট প্রেমাদাশা এক পর্যায়ে ভারতীয় ভেড়াগুলো তাদের ব্যারাকের বাইরে না যাবার নির্দেশ দেন। অবশেষে প্রেমাদাশার নির্দেশে ২ বছর ৭ মাস ৩ সপ্তাহ ৩ দিন পর ভারতীয় সেনাবাহিনী শ্রীলংকা হতে বের হয়ে যায়। এই ব্যর্থ অভিযানে দেড় হাজারেরও বেশি ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়।
এমন বিশ্বাসঘাতকতা ও অপমানজনক অভিজ্ঞতার পরেও ভারত নামক রাষ্ট্রের বেহায়া নীতি-নির্ধারকদের লজ্জা হয় না। কোন লজ্জায় এরা বলে আফগানস্তানে লাথি খেলে দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা বিঘিœত হবে। আমরা মনে করি ভারত নামক এই আগ্রাসী ফকির ভারত খন্ড বিখন্ড হলেই দক্ষিণ এশিয়ার ছোট ছোট দেশগুলোর স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপদমুক্ত। পুরো অঞ্চল কেবল শান্তিপূর্ণই নয়, পরমাণু অস্ত্রমুক্ত হবে।
ভারত আগাগোড়া একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র। অন্যের দেশ দখল করারই এর বৈশিষ্ট্য। কাশ্মীর, সিকিম, গোয়া, দমন, দিউ, মেঘালয়, আসাম, ত্রিপুরা, মিজোরাম, মনিপুর, নাগাল্যান্ড, অরুনাচল প্রদেশ, আন্দামান, নিকোবার ও লাক্ষ্মা দ্বীপপুঞ্চ কখনোই ব্রিটিশদের দখলের আগে ভারতীয় ভূখন্ডভুক্ত ছিল না। এই ছাড়া ভারতের ভিতর এমন বহু ব্রিটিশ আমলের দেশীয় রাজ্য রয়েছে, যেগুলো ভারতের বাইরে রাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীন থাকতে চেয়েছিল। কুটিল নেহেরু ও সন্ত্রাসী প্যাটেল শক্তি প্রয়োগ করে ওই রাজ্যগুলোকে ভারতভুক্ত করে।
ভারত জবর দখলীকৃত কথিত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত জনপদগুলোকে উপনিবেশ হিসিবে শোষণ ও শাসন করছে। এই সব হারিয়ে যাওয়া জনপদ ও দেশ বর্তমানে ভারতীয় রাজ্য কিংবা তথাকথিত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল স্বাধীন হবার জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে। সন্ত্রাসী ভারত এইসব পররাজ্য দখলে রাখার জন্য ভারতের তাবেদার-দালাল এবং সেনাবাহিনীর নির্মমতাই একমাত্র ভরসা। বাইরে গণতন্ত্র বাস্তবে নিষ্ঠুর নির্মমতা। তাসত্বেও ভারত ভাঙতে এদের উদ্যোগ আর আত্মত্যাগ অপরিসীম। এরা স্বাধীনতার পথে হাটবেই। ভারত যেন মনে না করে যে কেউই আফগানিস্তানকে ঘায়েল ও গ্রাস করার জন্য ভারত এখন বলছে গত দু’দশকে আফগানিস্তানের বিভিন্ন খাতে এবং পরিকাঠামো উন্নয়নে যে বিনিয়োগ করেছে তার ভবিষ্যৎ নিয়ে ভারত নাকি উদ্বিঘœ। ভারতের নাকি স্বার্থহানি হবে। আনন্দবাজার পত্রিকার ভাষায়: “যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে পার্লামেন্ট ভবনটিই শুধু নয়, সালমা বাঁধ পুনর্গঠন, বিভিন্ন স্কুলকে ফের তৈরি করা, কান্দাহর ক্রিকেট স্টেডিয়াম, হাসপাতাল তৈরির মত ৩৬টি বড় প্রকল্প একক ভাবেই করেছে ভারত।”
ভারতীয় ইকোনমিক টাইম্স জানায় আফগানিস্তানে ভারতের মোট বিনিয়োগ দুই বিলিয়ন ডলারের মতো। আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়: “নতুন পরিস্থিতিতে এগুলি আর নিরাপদ নয় বলেই মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি কাবুলে নিজেদের দূতাবাস এবং কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে। মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পরে সে দেশে পাকিস্তানের প্রভাবই শুধু বাড়বে না, দিল্লী মনে করছে ওই ফাঁকা পরিসরটিকে কাজে লাগিয়ে লস্কর-ই-তইবা বা জইশ-ই-মহম্মদ-এর মত জঙ্গি সংগঠনগুলির রমরমাও বাড়বে। ভারত বিরোধিতায় তাদের আরও বেশি করে কাজে লাগানোর ছাড়পত্র থাকবে পাকিস্তানের হাতে।”
আনন্দবাজার তথা ভারত সরকারের এমন যুক্তির জবাবে বলা যায়:-
১. আফগানিস্তানকে যুদ্ধবিধ্বস্ত করার জন্য কারা? গত ৪০ বছর ধরে আফগানিস্তানে বিদেশী দখল এবং গণহত্যা ও দেশকে ধ্বংস্তুপে পরিণত করার সহযোগী দালাল ও বরকন্দাজ হিসেবে ভারত তার দায়-দায়িত্ব অপরাধ ও জবাবদিহিতা এড়াতে পারে না।
২. আফগানিস্তানের কোন বৈধ সরকার ভারতকে তার সংসদ ভবন কিংবা অন্যকোন স্থাপনা গড়ে তোলার দায়িত্ব দেয় নি। দখলদার আমলের তল্পীবাহক সরকারের কিংবা খোদ আমেরিকার ফেলে যাওয়া ভারত নামক ‘লাশ’ আফগান জনগণ বহন করবে কী না, সেটা নির্ধারণের দায়িত্ব আফগান জনগণের আমেরিকার কিংবা তার তাঁবেদারদের নয়।
৩. কাবুলে ভারতীয় দূতাবাস এবং কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে অগ্রিম দুশ্চিন্তায় পড়ার মাধ্যমেই ভারত তার অপরাধের ভারীত্ব বুঝতে পারছে। এইসব দূতাবাস ছিল ভারতীয় চর ও সন্ত্রাসী তৈরির ও পাকিস্তান ভাঙার কারখানা। আর দূতাবাসের সবকর্মীই ছিল ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের চর এবং অপারেটিভ। ভারত পুরা আফগাস্তিানকে পাকিস্তান ও চীন, এমনকি ইরান বিরোধী ঘাঁটিতে পরিণত করে। সুতরাং এই ধরনের বিপদজনক দূতাবাস নামক মিনি সেনানিবাস এখন অবশ্যই স্বাভাবিক দূতাবাসে ফিরে যেতে হবে। এটাই স্বাভাবিক ও প্রত্যাশিত।
৪. ভারতকে মনে রাখতে হবে তালেবানরা পুরো শান্তি প্রক্রিয়ায় কোনভাবেই ভারতকে জড়ানোর সুযোগ দেয় নি। ভারতকে তালেবানরা পরগাছা কিংবা আমেরিকা ও সোভিয়েট ইউনিয়নের ‘ফুটম্যান’ আর্দালি ভাড়াটে মনে করে। এই আর্দালি আফগান জনগনের পরাধীনতা ও দুঃখ-দুর্দশা দীর্ঘায়িত করার জন্য দায়ী। যখনই দখলদার আফগানিস্থান ছাড়তে উদ্যোগী হয়েছে আর্দালি ভারত সেখাইে কুপরামর্শ দিয়ে দখলদারিত্বকে প্রলম্বিত করেছে। সুতরাং এমন ‘উড়ে এসে জুড়ে বসা’ অপরাধী ভারতের সাথে তালেবানরা বসবে কেন?
৫. ১৯৭৯ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং ২০০১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত আমেরিকা আফগানিস্তানকে দখলে রেখে গণহত্যা ও নির্যাতন চালিয়েছিল। আর ভারত ১৯৭৯ সাল হতে ২০২০ সাল এই ৪০ বছরই আফগানে গণহত্যা, নগণ্যের দুঃখ-দুর্দশা ও ধ্বংসলীলার সহযোগী। সহযোগী হিসেবে ভারতকে মাশুল দিতেই হবে। মাঝখানের ১২ বছর বিদেশী শাসনমুক্ত থাকলেও আফগানিস্তান ‘র’মুক্ত ছিল না। অনৈক্য-বিভক্তি, গোষ্ঠীগত হানাহানি, নেতৃত্বের দ্বন্ধ লাগিয়ে রাখতে ভারতীয় ‘র’ এবং অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা অবিরত সক্রিয় ছিল। তালেবানদের শাসনের সময় তালেবানদের বিরুদ্ধে বিদেশে জনমত তৈরি করার জন্য ভারত বিশেষ ভূমিকা রাখে। তালেবান আমলে সোভিয়েত চরদের ভারত আশ্রয় দিয়ে তাদেরকে তালেবানদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে।
৬. আফগানিস্তানে হামলা চালানোর জন্য ভারতই সবার আগে তার আকাশ, মাটি, পানি আমেরিকার জন্য খুলে দেয়ার ঘোষণা দেয়। আফগানিস্থানকে তচনছ করতে ভারতের মানবতাবিরোধী কুৎসিত অপকর্ম ভারত কীভাবে অস্বীকার করবে? ভারতকে তার মানবতাবিরোধী কাজের জবাবদিহি করতে হবে না, কিংবা মাশুল গুণতে হবে না, এমনটি ভাবার কোন সুযোগ ভারতের নেই। যখন যে বিদেশী হামলাকারী আফগানিস্তান দখল করে ভারত তারই দালাল হিসেবে সেদেশে হাজির হয়।
৭. আফগানরা তাদের জীবন দিয়ে তাদের দেশ ৪০ বছরের মধ্যে দুই দুইবার স্বাধীন করেছেন। এই স্বাধীনতার ভাগ তার দখলদারদের লেজুড় ভারতকে দিবে কেন? ভারতের ভূমিকা দখলদারদের চেয়েও জঘন্য। দখলদার চলে যাবার পর আফগানিস্তানের মাটিতে সেবাদাস ভারত কোন যুক্তিতে সেই দেশে থাকার আবদার করে?
৮. শান্তিচুক্তির কোথাও আফগানিস্তানে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগকারী, অবকাঠামোসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণকারী আমেরিকা কিংবা আমেরিকার সহযোগী অথবা আর্দালীরা কোনকিছুর মালিক থাকার কিংবা সেগুলো দেখাশুনা করার কিংবা মূলধন ফিরিয়ে নেয়ার কথা নেই। ফলে সেখানে বিনিয়োগকৃত সবকিছুর মালিক আফগান জনগণ। আফগানিস্তানে ফকির ভারতের ‘চালাও গেল মালাও গেল’।
চুক্তি পড়ে আগ্রাসী ভারতের কয়জন দুষ্কৃতিকারী জ্ঞান হারিয়েছে তা জানা যায় নি। সামান্যতম শরম থাকলে খুনি মোদি কিংবা সন্ত্রাসী অমিত শাহ অবশ্যই কিছুদিন চাপাবাজি ও আস্ফালন বন্ধ রাখবে। ফকির ভারতের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে ‘নমস্তে ট্রাম্প’ তেলবাজি নামক শয়তানি কোন কাজে আসে নি, তার জন্যও তাকে পস্তাতে হচ্ছে।
“মার্কিন-তালিবান শান্তি চুক্তির কথা ঘোষণা হওয়ায় অবশ্য খুশি সাধারণ আফগানরা। কান্দাহারে শুক্রবার মধ্যরাতেই শুরু হয়ে যায় আনন্দ উৎসব। সেখানে রাস্তায় নাচতে দেখা যায় সাধারণ মানুষকে। জালালাবাদে বেরোয় সাইকেল মিছিল।” আনন্দের এই খবরগুলোও দিয়েছে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা।
অথচ সেই ভারতেরই নীতি-নির্ধারকরা আফগানিস্তানে বিদেশীদের দখলদারিত্ব অব্যাহত রাখার পক্ষে ওকালতি করে। এরা চায় আফগানরা মরুক। ভারতের স্বার্থসিদ্ধি না হওয়া পর্যন্ত আফগানিস্তান হয়তো অন্যের দখলে থাকুক, অথবা ভারতের দখলে আসুক। ভারতীয় নীতি-নির্ধারকরা আদৌ কী মানুষ, না অন্যকিছু?
আফগানিস্তানের দিকে না তাকিয়ে ভারতীয় নীতি-নির্ধারকদের উচিত হবে নিজের ঘর সামলানো। হিন্দুত্ববাদের যে ঝাপি খুনি মোদি খুলে দিয়েছে তাতেই ভারত শেষ হবে। হিন্দুত্ববাদের মনসা’ই ভারতকে খেয়ে ফেলবে। সেই জন্য পাকিস্তান কিংবা চীনকে লাগবে না। আর ভারতকে অস্ত্র-গুদাম বানিয়ে শেষরক্ষাও হবে না। সোভিয়েত ইউনিয়নে কমিউনিজমের মৃত্যুর সময় কিংবা দেশটি ১৫ টুকরা হবার সময় তাদের কাছে অজানা সংখ্যক পারমানবিক বোমাসহ সর্বাধিক মরণাস্ত্র ছিল। কিছুই কমিউনিজম কিংবা সুপার পাওয়ার সোভিয়েত ইউনিয়নকে রক্ষা করতে পারে নি। সোভিয়েত ইউনিয়নের তুলনায় ভারত ফকিরের চেয়েও তুচ্ছ। ভারত কীভাবে কাঁচের ঘরের মতো র্ঝ র্ঝ করে ভেঙে পড়ে তা দেখার সময় ঘনিয়ে আসছে। হয়তো ভারতীয় আগ্রাসী নীতি-নির্ধারকরা তাদের আসন্ন বিপদ আঁচ করতে পারছেন না।