জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা আঙ্কটাড আগামী দিনের বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তা অতিমাত্রায় আশঙ্কাজনক। সংস্থাটি বলেছে, করোনা ও চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব; আগামী বছর এ মন্দা বিশ্বব্যাপী আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। মন্দার প্রভাবে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হ্রাস পাবে, কমে যাবে বিনিয়োগ। এর প্রভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে যাবে, বাড়বে বেকারত্ব। মন্দার প্রভাবে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাবে, হ্রাস পাবে বিশ্ববাণিজ্য। আঙ্কটাড আরও বলেছে, আগামী দিনে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশের মুদ্রার মানে অস্থিরতা অব্যাহত থাকবে। জ্বালানি সংকটের কারণে কৃষি উপকরণের দাম বাড়বে। এতে কৃষি উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি বড় রকমের হুমকির মধ্যে পড়বে। ফলে খাদ্য নিরাপত্তাহীন মানুষের সংখ্যা বাড়বে। সব মিলে বিশ্ব অর্থনৈতিক অবস্থা এমন জায়গায় চলে যাবে যে, সার্বিকভাবে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার কমে যাবে।
এর আগে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফও তাদের বিভিন্ন প্রতিবেদনে এ ধরনের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘের মহাসচিবও বলেছেন, আগামীতে বিশ্ব বড় ধরনের অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে পড়তে যাচ্ছে। আঙ্কটাডের বর্তমান প্রতিবেদনটি নতুন করে আশঙ্কার কথাটি জানিয়ে দিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও বিদেশ সফর শেষে দেশে ফিরে এক সংবাদ সম্মেলনে আগামী দিনের বিশ্ব পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। অর্থাৎ আগামীতে বিশ্ব যে বড় ধরনের সংকটে পড়তে যাচ্ছে, তা এক রকম নিশ্চিত করেই বলা যায়।
সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে বলতেই হবে, আগামীতে দেশের অর্থনীতিকে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য কিছু সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-স্থানীয় চাহিদার ক্ষেত্রে কিছু কঠোরতা আরোপ করা; প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার জন্য ডলারের বিপরীতে টাকার মান স্থিতিশীল রাখতে এবং মূল্যস্ফীতি রোধ করতে রাজস্ব ও মুদ্রানীতির মধ্যে অধিকতর সমন্বয় সাধন করা। একই সঙ্গে প্রণোদনার প্যাকেজগুলো চলমান রাখার সুপারিশও করা হয়েছে। এসবের পাশাপাশি আমরা মনে করি, দেশের অর্থনীতির সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় সরকারকে অবশ্যই সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে। ব্যাংকিং চ্যানেলে বা এলসির মাধ্যমে টাকা পাচার বন্ধ করতে হবে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে হুণ্ডি বন্ধ করতে হবে। রেমিট্যান্স পাঠানোর খরচ কমাতে হবে এবং তা সহজ করতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। কৃষিতে বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেশের ভেতর খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। এসব পদক্ষেপ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার কাজটি সহজ হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।