লোকমুখে প্রচলিত ভূতের গল্প নেই, এমন কোনো জাতি খুঁজে পাওয়া যাবে না। জাপানের জনপ্রিয় কিছু ভৌতিক গল্পের ওপর ভিত্তি করে বেথেসডা স্টুডিওজ তৈরি করেছে গেম ‘ঘোস্টওয়্যার : টোকিও’। ইদানীং খুব কম নির্মাতাই কাহিনির ওপর সর্বোচ্চ জোর দিয়ে গেম তৈরি করছে, সবাই ব্যস্ত মাল্টিপ্লেয়ার ব্যাটল রয়াল তৈরিতে। ফলে ঘোস্টওয়্যার অসাধারণ না হলেও বর্তমান সময়ের অন্যতম উল্লেখযোগ্য গেম।
শুরুর দৃশ্যে দেখা যাবে, এক বিদেহী আত্মা খুঁজে বেড়াচ্ছে ভর করার জন্য একটি দেহ। চারদিকে চলছে অজানা কোনো শক্তির প্রভাবে বড়সড় বিপর্যয়। স্থানটি টোকিওর কোনো একটি ব্যস্ত চৌরাস্তা। গাড়িচালক থেকে পথচারী, সবাই একে একে অদৃশ্য শক্তির কবলে মারা যাচ্ছে। এর মধ্যে তরুণ আকিটোর দেখা পায় আত্মাটি, যার দেহে এখনো প্রাণ থাকলেও তার আয়ু আর বেশিক্ষণ নেই। তার ওপরেই ভর করে সে। আকিটো জ্ঞান ফিরে পায়, যদিও সঙ্গে সঙ্গে তার মাথার ভেতর কথা বলে ওঠে আত্মাটি।
আকিটো ভয় পেয়ে গেলেও আত্মার দেওয়া নির্দেশনায় সে চারপাশের ভৌতিক শত্রুদের পরাস্ত করে এগিয়ে যায়। এর পরই গেমের মূল ভিলেনের দেখা মেলে। তার আসল নাম কখনোই জানা যায় না, শুধু তার পরনে থাকা হানিয়া মুখোশের কারণেই তাকে হানিয়া নামে সম্বোধন করে। হানিয়ার লক্ষ্য, সব মানুষের আত্মাকে জোর করে দেহত্যাগ করিয়ে সেগুলোকে নিজের কাজে লাগানো। কেকের লক্ষ্য, তাকে থামিয়ে সবাইকে রক্ষা করা। আর কোনো এক কারণে আকিটোর বোনকে নিজের জাদুবিদ্যায় কাজে লাগানোর চেষ্টা করে হানিয়া, তাই গেমটিতে আকিটোর চেষ্টা থাকে তার বোনকে উদ্ধার করার।
কেকে আর আকিটোর সম্পর্ক গেমটির বড় অংশ। শুরুতে দুজন একে অন্যকে সহ্যও করতে না পারা থেকে শুরু করে আকিটোর দেহে কেকের মাধ্যমে অতিপ্রাকৃত ক্ষমতার সঞ্চারণ এবং শেষের দিকে দুজনের মধ্যে সমঝোতা কাহিনির বড় অংশজুড়ে রয়েছে।
কাহিনির নাটকীয়তা যেমন রূপকথার মতো, তেমনই ভিলেনের কাজকর্ম, বেশ কিছু শত্রুর ডিজাইন, আত্মাদের উদ্ধারের উপায়, এমনকি চরিত্রদের কথোপকথনের ধরনও সরাসরি জাপানি লোককাহিনি থেকে নেওয়া। গেমটি খেলার সময় পাওয়া যাবে জাপানি লোকসংস্কৃতির আমেজ।
গ্রাফিকসেও গেমটি বেশ এগিয়ে আছে, রে-ট্রেসিং প্রযুক্তির লাইটিং সিস্টেম গেমটির ছায়াঘেরা রহস্যময় পরিবেশকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে। যাদের এখনো রে-ট্রেসিং ফিচারযুক্ত জিপিইউ নেই তারাও সহজেই খেলতে পারবে, গ্রাফিকসের মান খারাপ লাগবে না মোটেই।
গেমটির ভালো দিক এখানেই শেষ। সিঙ্গলপ্লেয়ার গেম হওয়ার পরও মূল কাহিনি খুবই ছোট, গেমপ্লের কিছু সময় পর লাগতে পারে একঘেয়ে, বেশ কিছু বাগ এখনো রয়ে গেছে। একবার শেষ করার পর বারবার খেলার ইচ্ছা না হওয়াই স্বাভাবিক। এক বসায় শেষ করে ফেলাও অসম্ভব নয়।
বয়স
খেলতে পারবে শুধু প্রাপ্তবয়স্করা।
খেলতে যা যা লাগবে
অন্তত চতুর্থ প্রজন্মের ইন্টেল কোর আই৭ বা দ্বিতীয় প্রজন্মের এএমডি রাইজেন ৫ প্রসেসর, ১২ গিগাবাইট র্যাম, এনভিডিয়া জিটিএক্স ১০৬০ ৬ গিগাবাইট বা এএমডি আরএক্স ৫৫০০এক্সটি ৮ গিগাবাইট সংস্করণ (৬ গিগাবাইট থাকতেই হবে) এবং অন্তত ২০ গিগাবাইট জায়গা, এসএসডি থাকলে ভালো।