Saturday, July 27, 2024
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামআইএমএফের উদ্বেগজনক পূর্বাভাস

আইএমএফের উদ্বেগজনক পূর্বাভাস

মঙ্গলবার আইএমএফ ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ প্রতিবেদনে আগামী দিনগুলোয় বিশ্ব অর্থনীতির স্বরূপ কেমন হবে, তার একটি পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের বিষয়টি পড়েছে অনিশ্চয়তার মধ্যে।

বিশ্বের প্রায় সব বড় অর্থনীতির দেশ যেমন পড়েছে অনিশ্চয়তার মধ্যে, তেমনি এর প্রভাবে স্বল্প ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতেও দেখা দিয়েছে অর্থনৈতিক মন্দা। উচ্চ মূল্যস্ফীতির ধাক্কায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বড় অর্থনীতির দেশগুলো। একইসঙ্গে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানেও লেগেছে মূল্যস্ফীতির বড় ধাক্কা। ২০২২ সালজুড়ে এ ধাক্কা অব্যাহত থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফের প্রতিবেদন।

আইএমএফের পূর্বাভাস উদ্বেগজনক বটে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২১ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ১ শতাংশ। ২০২২ সালে এ হার অর্ধেক কমে দাঁড়াতে পারে ৩ দশমিক ২ শতাংশে। আর ২০২৩ সালে তা আরও কমে হতে পারে ২ দশমিক ৯ শতাংশ। অর্থাৎ ২০২১ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে প্রবৃদ্ধির হার অর্ধেকের বেশি কমে যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলছেন, ইউরোপ-আমেরিকা-কানাডায় অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলে সেই ঢেউ কম-বেশি বাংলাদেশে লাগবেই। কারণ রপ্তানির একটি বড় অংশ পরিচালিত হচ্ছে ওই দেশগুলোকে কেন্দ্র করে। রেমিট্যান্সের একটি বড় অংশও আসছে ওই দেশগুলো থেকে। আইএমএফ যেহেতু পরপর দুই বছর প্রবৃদ্ধি কমার আভাস দিয়েছে, তাই এখনই আমাদের নিতে হবে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। তার মতে, রেমিট্যান্স কমার পর রপ্তানিই অর্থনীতিতে চাপ সহ্য করতে সহায়তা করছে। রপ্তানি কমলে এ চাপ আরও বাড়বে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হবে শ্রমবাজারে।

আইএমএফের এ পূর্বাভাসের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সিপিডির সাম্প্রতিক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে যেসব মন্তব্য উঠে এসেছে, তা উল্লেখ করতে পারি। সেখানে বলা হয়েছে, দেশে ব্যাংকিং ও অন্যান্য আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা চলছে। দেশ থেকে প্রতিবছর বিপুল অঙ্কের টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে অনেক আগে থেকেই।

প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্নীতি হচ্ছে। বর্তমানে এসবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বৈশ্বিক পরিস্থিতি। সবকিছু মিলে দেখা দিয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট। এর ফলস্বরূপ সৃষ্টি হয়েছে জ্বালানি সংকট। এই সূত্র ধরেই দেখা দিয়েছে বিদ্যুৎ সংকট। অর্থাৎ একটির সঙ্গে আরেকটি সম্পর্কযুক্ত। ওদিকে উচ্চ আদালত বলেছেন, দেশে ব্যাংক খাতে ঘটে চলেছে সবচেয়ে বড় অপরাধ।

সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় আমরা মনে করি, যে কোনো সংকট মোকাবিলায় রাজনৈতিক উপলব্ধি, সরকারের সদিচ্ছা এবং সঠিক সিদ্ধান্তের বিষয়টি খুবই জরুরি। কোনো সমস্যা যখন তৈরি হয়, তখন প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও সতর্কতা না থাকলে তা আরও বড় আকার ধারণ করতে পারে।

আমরা আরও মনে করি, অর্থনীতি যদি সঠিক পথে পরিচালিত হয়, দুর্নীতি-অনিয়মের লাগাম টেনে ধরা যায়, তাহলে সংকট দানা বাঁধতে পারে না। আর তাই আইএমএফের পূর্বাভাসের পর দেশের সরকার ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখন থেকেই সতর্কতামূলক অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। ভুল-ত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে সঠিক পথে সামনে এগোতে হবে। এ মুহূর্তে দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদদের উচিত সরকারের পাশে এসে দাঁড়ানো। তাদের সুচিন্তিত মতামত দেশের অর্থনীতিতে প্রতিফলিত হলে তা অনেক কাজে আসবে বলে মনে করি আমরা। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোরও উচিত সরকারের সমালোচনার পথ পরিহার করে বরং সরকারের পাশে এসে দাঁড়ানো। তাদের মনে রাখা দরকার-ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে বড় দেশ।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments