বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর কাছে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়েছে। এই ঋণ চাওয়ার বিষয়টি শুরুতে সরকারের পক্ষ থেকে অস্বীকার করা হলেও আইএমএফ জানায়, বাংলাদেশ থেকে ঋণ চেয়ে তাদের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব গিয়েছে।
‘এই মুহূর্তে আইএমএফ এর ঋণের প্রয়োজন নেই’ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এমন বক্তব্য দেওয়ার কয়েকদিন পরই ঋণ চাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে নেন। অর্থমন্ত্রী এখন বলছেন, আইএমএফের কাছে ঋণ চাওয়ার মানে এই নয় বাংলাদেশের অর্থনীতি খারাপ অবস্থায় আছে।
অন্যদিকে, আইএমএফ এর কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার বিষয়টিকে ‘বেইল আউট’ থেকে বাঁচার প্রয়াস হিসেবে দেখানোর বিষয়টিকে সামগ্রিকভাবে জাতিগত অপমানের শামিল বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেছেন, বেইল আউট বা দেউলিয়া হওয়া থেকে বাঁচতে নয়, বরং আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় যে বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে, সেটি মেটাতেই আইএমএফ এর কাছ থেকে ঋণ নেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এমন কথা বললেও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশের ঋণ চাওয়ার বিষয়টি নিয়ে যেসব সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে, সেগুলোতে ঘুরেফিরেই আসছে ‘বেইল আউট’ শব্দদ্বয়।
অর্থনীতি বিষয়ক বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের জন্য (যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক) বিশ্ববিখ্যাত প্রতিষ্ঠান ব্লুমবার্গ এ অ্যান্ডি মুখার্জি “বাংলাদেশ ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে, কিন্তু এখন তাকে প্রতিবেশীর কাছ থেকে শিখতে হবে” শিরোনামে তার কলামে লিখেছেনঃ ঢাকা ক্রমবর্ধমান ধুকছে তবে দেশটি তার অর্থনীতিকে আরও ঠিক করতে আইএমএফ এর বেইল আউটকে কাজে লাগাতে পারে। গত বছর জাতিসংঘ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের নাম অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয়। বর্তমানে বাংলাদেশের মাথাপিছু জাতীয় আয় ভারতের চেয়েও বেশি। কিন্তু, উদযাপনের বিষয়টি ব্যাহত হয়েছে একটি কড়াঘাতে। বাংলাদেশ এখন কঠিন মুদ্রা ঘাটতির সম্মুখীন যা থেকে বের হতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের বেইল আউট প্রয়োজন।
প্রভাবশালী বৃটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানের শিরোনামেই ছিল বেইল আউট কথাটি। “বেইল আউটের আবেদনের পর আইএমএফের সঙ্গে আলোচনায় বসছে বাংলাদেশ” শীর্ষক প্রতিবেদনে পত্রিকাটি শুরুতেই লিখেছেঃ দেশে নগদ অর্থের অভাব ঠেকাতে বেইল আউটের আবেদনের পর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। মহামারী চলাকালীন প্রায় ৯০ টি দেশ আইএমএফের কাছে সাহায্য চাইলেও মাত্র কয়েকটি দেশ ঋণ খেলাপি হওয়া বা বিল পরিশোধ করতে অক্ষম হওয়ার জন্য বেইল আউট চাইতে বাধ্য হয়েছে বলেও উল্লেখ করে গার্ডিয়ান।
বেইল আউটের জন্য বরাদ্দকৃত তহবিল কোথায় ব্যয় করা হয় সে সম্পর্কে স্বচ্ছতার উপর অতীতে আইএমএফ কর্মকর্তারা জোর দিয়েছিলেন বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।
শ্রীলঙ্কান ইংরেজি দৈনিক ডেইলি মিরর এ “বাংলাদেশ কেন আইএমএফ এর বেইল আউট চাচ্ছে?” এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চেয়েছেন পি.কে. বালাচন্দ্র। তিনি লিখেছেনঃ ২০২১ সালের মে মাসে, বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কাকে ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের কারেন্সি সোয়াপ (মুদ্রা বিনিময় প্রথা) সুবিধা দিয়েছিল যাতে বৈদেশিক মুদ্রার গুরুতর রকম ঘাটতিকে মোকাবিলা করা যায়। কিন্তু এক বছর পর, বাংলাদেশ নিজেই বাজেট এবং বেলেন্স অফ পেমেন্ট সহায়তার জন্য আইএমএফ এর কাছে ৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেইল আউট প্যাকেজ চাইছে।
ভারতের উইওন নিউজ এর এক প্রতিবেদনের শুরুতেই উপস্থাপিকা বলেনঃ বেইল আউট নিয়ে আলোচনা করা যাক। দক্ষিণ এশিয়ার আরেকটি দেশের টাকা দরকার। শ্রীলঙ্কা দিয়ে শুরু হয়েছিল, এরপর পাকিস্তান, এখন বাংলাদেশও আইএমএফ এর দ্বারে সাহায্য প্রার্থনা করছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশজুড়ে এমনকি ১৩ ঘন্টা পর্যন্ত ব্ল্যাকআউট (বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে অন্ধকারে ডুবে যাওয়া) হচ্ছে উল্লখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়ঃ বাংলাদেশের জন্য এই (আইএমএফ এর) ঋণ পাওয়াটা এখন প্রয়োজনীয়। কারণ দেশটির অর্থনৈতিক মানদন্ডগুলো ভালো ঠেকছে না। বিগত মাসগুলোতে বাংলাদেশের আমদানি লাফিয়ে বেড়ে ৩৯% হয়েছে। যেখানে রপ্তানি বেড়েছে ৩৪%। তাছাড়া, বাংলাদেশের টাকার মান ডলারের বিপরীতে ২০% কমেছে।