Saturday, April 20, 2024
spot_img
Homeবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিঅস্ত্রপাতিও মিলছে থ্রিডি প্রিন্টে

অস্ত্রপাতিও মিলছে থ্রিডি প্রিন্টে

থ্রিডি প্রিন্টিং চমৎকার প্রযুক্তি। পিসিতে যেকোনো জিনিস ডিজাইন করে সেটা প্রিন্ট করে তৈরি করা যায়, যেমন—কোনো কিছুর মডেল বা ছোটখাটো যন্ত্র। দুঃখজনক ব্যাপার, প্রযুক্তিটির জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটির অপব্যবহারও বাড়ছে।

গুলি তো আর প্রিন্ট করা যায় না

সম্প্রতি যুক্তরাজ্য পুলিশ জানিয়েছে, বেশ কিছু অবৈধ থ্রিডি প্রিন্টিংয়ের অস্ত্র তৈরির কারখানায় তারা অভিযান চালিয়ে অত্যাধুনিক সব ডিজাইনের অস্ত্র জব্দ করেছে।

আগে থ্রিডি প্রিন্ট করা বন্দুক একেবারেই সাদামাটা হতো। দেখা যেত, একটি গুলির বেশি কাজে লাগানো যেত না, তার লক্ষ্যভেদ করার ক্ষমতাও ছিল একেবারেই বাজে। আজ সেই দিন নেই, ফুল অটোমেটিক মেশিনগানও প্রিন্টারে তৈরি করা যাচ্ছে।

শুধু অস্ত্রের নল আর গুলির চেম্বার ধাতব রেখে বাকি পুরো বডি ও অন্যান্য অংশ প্লাস্টিকেই তৈরি করছে এসব নির্মাতা। ফলে থ্রিডি প্রিন্টিং করেই তৈরি হয়ে যাচ্ছে অস্ত্রের ৯০ শতাংশ। চেম্বার আর নল যেকোনো লেদ থেকেই তৈরি করা সম্ভব। তাই এসব রেজিস্ট্রেশন ও সিরিয়ালহীন অস্ত্র অনায়াসেই অপরাধীদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে, যার মালিকানা প্রমাণ করারও উপায় থাকছে না। এখনো থ্রিডি প্রিন্ট করা অস্ত্রজনিত অপরাধ কিছুটা কম, কারণ গুলি এখনো প্রিন্ট করার উপায় নেই।

প্রসার বাড়ছেই

গুলি নেই বলে এর প্রসার একেবারে কমও নয়। গত এক বছরে যুক্তরাজ্যেই ২১টিরও বেশি হত্যায় বা হত্যাচেষ্টায় থ্রিডি প্রিন্ট করা বন্দুক ব্যবহারের নজির রয়েছে। বিশেষ করে কভিডজনিত লকডাউনের সময় সাধারণ অস্ত্রপাতি বর্ডার পার করতে না পেরে অপরাধীরা বেছে নিয়েছে থ্রিডি প্রিন্টার।

ব্রাইটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান ও পাবলিক পলিসি বিভাগের অধ্যাপক পিটার স্কয়ারস বলেন, দিন দিনই প্রযুক্তিটির প্রসার ও অপব্যবহার বাড়ছে। থ্রিডি প্রিন্টার বিষয়ক নীতিমালা ও আইন প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি।

তিনি আরো বলেন, হতে পারে প্লাস্টিকের এসব প্রিন্টারে তৈরি অস্ত্র তেমন কার্যকর নয়; কিন্তু ভয় দেখানোর জন্য যথেষ্ট। যেসব অপরাধে অস্ত্র ব্যবহার করা হয়ে থাকে, সেসবের মাত্র ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটে, বাকি ৮০ শতাংশ অপরাধে অস্ত্র শুধু হুমকি দেওয়ার জন্যই কাজে লাগানো হয়। সেসব অপরাধ বহুগুণ বাড়বে যদি অস্ত্রের সহজলভ্যতা এভাবে বেড়ে যায়।

এর মধ্যেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে চরমপন্থীদের ফোরামে থ্রিডি প্রিন্ট করে তৈরি করা যায় এমন মেশিনগানের ডিজাইন এবং কিভাবে সেটা তৈরি ও ব্যবহার করতে হবে তার প্ল্যান পাওয়া গেছে। অস্ত্রটি তৈরি করা কঠিন, কিন্তু তৈরিতে যেসব যন্ত্রাংশ ও উপাদান লাগবে সেগুলো পাওয়া খুবই সহজ ও বৈধ। কিভাবে তার প্রসার ঠেকানো যায়, সেটা নিয়েই কাজ করছে ইন্টারপোল।

বন্ধের জন্য চাই উদ্যোগ

প্লাস্টিকের মেশিনগান নির্ভরযোগ্য কি না, সে প্রশ্নের উত্তরে এটির ব্যবহারকারীরা বলেছে, বাজারের আর দশটি অস্ত্রের মতোই এটিকে নির্ভরযোগ্য করে প্রিন্ট করা সম্ভব। টানা ব্যবহারে অবশ্য সেটা বেশি সময় টিকবে না, কিন্তু হত্যার জন্য একটি বুলেটই যথেষ্ট, শত শত নয়। মূল উদ্দেশ্য পূরণ হলেই হলো।

সামনের দিনগুলোতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে থ্রিডি প্রিন্টার বিক্রি ও ব্যবহারের ওপর নজরদারি করতে হবে। তবে চাইলে প্রিন্টার নির্মাতারা মেশিনগুলোর ফার্মওয়্যারে অস্ত্রসদৃশ মডেল প্রিন্টিং ব্লক করে দিতে পারেন, যেমনটা কালার প্রিন্টারে টাকা প্রিন্ট করার বিরুদ্ধে করা হয়েছে। তবে থ্রিডি প্রিন্ট করা বন্দুক পুরোপুরি বন্ধ করা যাবে না। গুলি যাতে ঘরে তৈরি করা না যায়, সেদিকে নজর বাড়াতে হবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments