Thursday, April 18, 2024
spot_img
Homeধর্মঅস্ট্রেলিয়ার উন্নতিতে মুসলিম অবদান

অস্ট্রেলিয়ার উন্নতিতে মুসলিম অবদান

খনিজসম্পদে প্রাচুর্যময় একটি দেশ অস্ট্রেলিয়া। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার মোট জনসংখ্যা (২০২২ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী) প্রায় দুই কোটি ৬১ লাখ ৪১ হাজার ৩৬৯ জন। যার মধ্যে মুসলমানের সংখ্যা ২.৬ শতাংশ। (ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক)

অ্যালুমিনা, কয়লা, লৌহ আকরিক, তামা, টিন, সোনা, রুপা, ইউরেনিয়াম, নিকেল, টংস্টেন, খনিজ বালি, সিসা, দস্তা, হীরা, ওপাল, প্রাকৃতিক গ্যাস, পেট্রোলিয়াম ইত্যাদির খনি পাওয়া যায় এখানে।

এসব খনিজসম্পদ থাকার ফলে আজ সিডনি, মেলবোর্ন, পার্থ (Perth) ও ক্যানবেরার মতো বড় বড় শহর সৌন্দর্য, চাকচিক্য ও বৈষয়িক উন্নতিতে ইউরোপ আমেরিকাকেও ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু এ কথা খুব কম মানুষেরই জানা আছে, অস্ট্রেলিয়ায় খনিজসম্পদ উত্তোলনে পাকিস্তানি ও আফগান মুসলমানদের বিরাট ত্যাগ ও অবদান রয়েছে।

বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া যে অর্থনৈতিক উন্নতিতে অগ্রসর, তাতে এশীয় অঞ্চলের হাজার হাজার মুসলমানের রক্ত ও ঘাম মিশে আছে। একসময় এখানকার খনিজ সম্পদগুলো আনা-নেওয়া করার জন্য উট ছাড়া ভালো কোনো মাধ্যম ছিল না। তখন আফগানিস্তান, পাকিস্তানের উটচালকরাই এ অঞ্চলের সমৃদ্ধিতে কাজ করেছিল। যদিও পরবর্তী সময়ে তত্কালীন ব্রিটিশ অফিসাররা ভীষণ খারাপ আচরণ করেছিল।

অস্ট্রেলিয়ার একজন গবেষক ক্রিস্টিন স্টিভেন ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে অত্যন্ত পরিশ্রম করে একটি গ্রন্থ সংকলন করেন। গ্রন্থটির নাম Mosque and Ghantown বা ‘ছাপড়া মসজিদ ও আফগান জনবসতি’। লেখক অনেক অধ্যবসায়ের পর তাঁর ৩৭২ পৃষ্ঠার দীর্ঘ গ্রন্থটিতে আফগান উট মালিকদের ইতিহাস সংকলন করেছেন। গ্রন্থটির ভূমিকায় তিনি লিখেছেন : ‘আফগানরা এবং তাদের প্রাণীগুলো একটি কঠিন সময়ে অস্ট্রেলিয়ার হূিপণ্ডে পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া সম্ভব করে তুলেছে। সে সময় এ কাজটি করতে অন্য লোকেরা বেশির ভাগই ব্যর্থ হয়েছে। তা সত্ত্বেও তাদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ এবং তাদের বিরুদ্ধে ভীতি প্রদর্শন করা হয়। তাদের একক সমাজকে পৃথক করে দেওয়া হয়। তাদের মন ও মানসিকতা এবং তাদের সভ্যতা ও সংস্কৃতি বোঝার তেমন চেষ্টাই করা হয়নি; বরং আজ পর্যন্ত তাদের প্রতি সাধারণত অনেক ভুল বোঝাবুঝি রয়ে গেছে। (সূত্র : টিন মস্ক অ্যান্ড ঘণ্টাউন, এবিসি ডটনেট ডট এইউ : shorturl.at/EFIQ7)

এমন কঠিন অবস্থার মুখোমুখি হওয়ার পরও অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম ছাপড়া মসজিদ নির্মাণ করেন। এসব মসজিদকে Tin Mosque-ও বলা হয়। আফগান মুসলমানরা নিজ নিজ এলাকার নামও রেখেছিল তাদের গোত্রের নামে। যেমন মিরি গোত্রের লোকেরা তাঁদের এলাকার নাম রেখেছিলেন মিরি এবং তাঁদের নির্মিত মসজিদগুলোও মিরি নামে পরিচিত হয়। তাঁদের কাজের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সিন্ধু, বেলুচিস্তান, সীমান্ত প্রদেশ ও আফগানিস্তান থেকে আরো অনেক আফগান মুসলমানকে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করতে শুরু করেন। ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে অ্যাডিলেইডে (Adelaide) শহর এলাকায় সর্বপ্রথম মসজিদ নির্মাণ করা হয়। দ্বিতীয় মসজিদটি ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে পার্থে নির্মাণ করা হয়।

বর্তমানে অবশ্য অস্ট্রেলিয়ায় মুসলিম অধ্যুষিত আলাদা একটি দ্বীপ আছে।

যাকে কোকোস (কিলিং) দ্বীপপুঞ্জ বা ‘প্যারাডাইজ আইল্যান্ড’ বলা হয়। ২৮টি প্রবালদ্বীপের দুটি কক্ষপথ নিয়ে গঠিত নজরকাড়া এই দ্বীপকে স্বচক্ষে দেখলে অনেকেই প্যারাডাইজ বা স্বর্গ বলে ফেলে।

১৬২২ সালে আবিষ্কৃত হয় কোকোস দ্বীপপুঞ্জ এবং ১৭০৩ সালে খোঁজ পাওয়া যায় কিলিং দ্বীপের। পরে ১৮০৫ সালে কোকোস দ্বীপপুঞ্জ ও কিলিং দ্বীপ মিলিত হয়ে উনিশ শতকে একটি যৌথ দ্বীপরাষ্ট্র গঠন করে, আর নাম দেওয়া হয় কোকোস-কিলিং দ্বীপ।

উনিশ শতকের শুরুতে এখানে একজন স্কটিশ ব্যবসায়ী ক্লুনিস রস বসতি স্থাপন করেন। তারপর তাঁর ব্যবসার কাজে মালভূমি থেকে কিছু শ্রমিক আনা হয়েছিল। দ্বীপের বর্তমান জনসংখ্যার বেশির ভাগই একসময় মালভূমি থেকে আসা। এখানে বসবাসকারী বেশির ভাগ মানুষই মুসলমান।

মুসলিমবান্ধব দেশ ও হালাল খাবারের নিশ্চয়তা থাকায় সারা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে দেশটি ভ্রমণের জন্য বেশ জনপ্রিয়।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments