সুলাইমান (আ.) ছিলেন মহান আল্লাহর প্রেরিত একজন নবী। এ ছাড়া তাঁর আরেকটি পরিচয় আছে। তিনি ছিলেন অদ্বিতীয় ও অনুপম সাম্রাজ্যের অধিকারী। মহান আল্লাহ তাঁকে শুধু সমগ্র পৃথিবীর নয়, বরং জিন জাতি, বিহঙ্গকুল ও বায়ুর ওপরও আধিপত্য দান করেছিলেন। আর সেই বিশাল সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য মহান আল্লাহ তাঁকে দান করেছিলেন বিশেষ মুজিজা। আজকে আমরা সেই মুজিজাগুলো সংক্ষেপে জানার চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ।
বায়ুপ্রবাহ ছিল তাঁর অনুগত
মানুষের আকাশে উড়াল দেওয়ার গল্প খুব বেশিদিনের নয়। প্রযুক্তির উৎকর্ষ আমাদের উপহার দিয়েছে রকেট, বিমান, ড্রোন আরো কত কী! এগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ গোটা বিশ্ব শাসন করে যাচ্ছে।
মহান আল্লাহ তাঁর নবী সুলাইমান (আ.)-এর জন্য বায়ুর প্রবাহকে অনুগত করে দিয়েছিলেন। সুলাইমান (আ.)-এর হুকুমমতো বায়ু তাঁকে তাঁর ইচ্ছামতো স্থানে বহন করে নিয়ে যেত। তিনি বায়ুর পিঠে নিজ সিংহাসনসহ সদলবলে সওয়ার হয়ে দুই মাসের পথ এক দিনে পৌঁছে যেতেন। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘এবং আমি সুলাইমানের অধীন করে দিয়েছিলাম বায়ুকে, যা সকালে এক মাসের পথ ও বিকেলে এক মাসের পথ অতিক্রম করত…।’ (সুরা : সাবা, আয়াত : ১২)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি সুলাইমানের অধীন করে দিয়েছিলাম প্রবল বায়ুকে। যা তার আদেশে প্রবাহিত হতো ওই দেশের দিকে, যেখানে আমি কল্যাণ রেখেছি।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৮১)
বায়ুর ওপর ভর করে পৃথিবীর যেকোনো স্থানে গমন করা এবং বায়ুকে আদেশ করে যেকোনো কাজ করানো ছিল তাঁর অন্যতম মুজিজা।
জিন জাতি ছিল তাঁর অধীন
মহান আল্লাহ জিন জাতিকে তাঁর অধীন করে দিয়েছিলেন। তিনি জিনদের মাধ্যমে সাগরের তলদেশ থেকে মূল্যবান মণি-মুক্তা, হীরা-জহরত তুলে আনতেন। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘এবং আমরা তার অধীন করে দিয়েছিলাম শয়তানদের কতককে, যারা তার জন্য ডুবুরির কাজ করত এবং এ ছাড়া অন্য আরো কাজ করত। আমরা তাদের নিয়ন্ত্রণ করতাম।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ২)
এবং কখনো কখনো তিনি জিনদের মাধ্যমে নির্মাণকাজও করাতেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন,
‘আর জিনের মধ্যে কিছুসংখ্যক তার [সুলাইমান (আ.)] সম্মুখে কাজ করত তার পালনকর্তার (আল্লাহর) আদেশে…।’ (সুরা : সাবা, আয়াত : ১২)। এমনকি জিনের মাধ্যমে হাজার মাইল দূর থেকে রানি বিলকিসের সিংহাসন নিমিষেই আনিয়ে নেওয়ার ঘটনা সবার জানা।
প্রাণিকুলের ভাষা বুঝতেন
যেহেতু মহান আল্লাহ সুলাইমান (আ.)-কে প্রাণিকুলেরও রাজত্ব দিয়েছিলেন, তাই তিনি তাঁকে প্রাণিকুলের ভাষা বোঝার মুজিজা দান করেছিলেন। পাখিরা তাঁর আদেশে নজরদারি, চিঠি আদান-প্রদানসহ বিভিন্ন কাজ করত। তিনি তাদের ভাষা বুঝতেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সুলাইমান দাউদের উত্তরাধিকারী হয়েছিল এবং বলেছিল, হে লোকসকল! আমাদের পক্ষিকুলের ভাষা শিক্ষা দেওয়া হয়েছে এবং আমাদের সব কিছু দেওয়া হয়েছে। নিশ্চয়ই এটি একটি সুস্পষ্ট শ্রেষ্ঠত্ব।’ (সুরা : নামল, আয়াত : ১৬)
এ ছাড়া তিনি পিপীলিকার ভাষাও বুঝতেন। পবিত্র কোরআনের সুরা নামলে যার বর্ণনা পাওয়া যায়।
কঠিন তামা তাঁর হাতে গলে যেত
তামার মতো শক্ত পদার্থকে মহান আল্লাহ সুলাইমান (আ.)-এর জন্য তরল ধাতুতে পরিণত করেছিলেন। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমরা তার জন্য গলিত তামার একটি ঝরনা প্রবাহিত করেছিলাম…’ (সুরা : সাবা, আয়াত : ১২) এভাবেই মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের যে দায়িত্ব প্রদান করেন, তা পালনের শক্তিও দান করেন।