Wednesday, March 22, 2023
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামঅর্থ পাচারের তদন্ত

অর্থ পাচারের তদন্ত

দেশ থেকে প্রতিবছর অন্তত ৭১ হাজার কোটি টাকা পাচার হলেও তা প্রতিরোধে কিংবা পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ কেন গ্রহণ করা যাচ্ছে না-এ বিষয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে দেশের দুর্নীতিবিরোধী একমাত্র স্বাধীন প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

প্রতিবেদনটি ২০ মার্চ রাষ্ট্রপতির কাছে দাখিল করা হবে বলে জানা গেছে। বস্তুত অর্থ পাচারসংক্রান্ত ২৭টি অপরাধের মধ্যে মাত্র একটি অপরাধের তদন্ত ও অনুসন্ধানের ক্ষমতা দুদককে দেওয়া হয়েছে। তাও আবার ঘুস ও দুর্নীতি, যা বিধি অনুযায়ী এমনিতেই দুদকের করার কথা।

এক্ষেত্রে সংস্থাটি মানি লন্ডারিং বা অর্থ পাচারসংক্রান্ত অপরাধ তদন্তের আওতার বাইরে রয়েছে, যেজন্য তারা অর্থ পাচারে জড়িত অপরাধীকে বিচারের মুখোমুখি করতে ব্যর্থ হচ্ছে।

মূলত এমন বাস্তবতায় অন্যান্য সংস্থার পাশাপাশি অর্থ পাচারসংক্রান্ত সাতটি সম্পৃক্ত অপরাধের অনুসন্ধান ও তদন্তের এখতিয়ার পেতে চায় দুদক। ২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ছাড়াও ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি, ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইন, ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৫৮ সালের দ্য ক্রিমিনাল ল’ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট এবং ২০১২ সাল ও পরবর্তী সংশোধনীসহ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে কাজ করছে দুদক।

বলার অপেক্ষা রাখে না, তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ ও বিশ্বায়নের ফলে দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে দুর্নীতি বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত হচ্ছে। হুন্ডি, ওভার ইনভয়েসিং, আন্ডার ইনভয়েসিং, পানামা পেপারস, প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারি, সেকেন্ড হোম প্রজেক্ট, ক্রিপ্টোকারেন্সি ছাড়াও শেল ব্যাংকিং কোম্পানিসহ নতুন নতুন অনুষঙ্গ যোগ হওয়ার বদৌলতে এসব ক্ষেত্র ব্যবহার করে ছদ্মবেশে বিদেশে বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচার হচ্ছে, যা প্রতিরোধ করা নিঃসন্দেহে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ।

এ অবস্থায় জনগণের বিশ্বাস ও আস্থার জায়গাটি অটুট রাখতে হলে দুদককে অবশ্যই তার কার্যকারিতার প্রমাণ রাখতে হবে; এমন আইন প্রণয়ণ করতে হবে, যাতে বিদেশে অর্থ পাচারকারীরা কোনোমতেই পার না পেতে পারে।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিদেশে অর্থ পাচার অন্যতম প্রতিবন্ধক, এতে কোনো সন্দেহ নেই। দেশ থেকে প্রতিবছর নানাভাবে বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচার হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটির (জিএফআই) এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০৩০ সাল নাগাদ এর পরিমাণ ১৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার (১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা) ছাড়িয়ে যেতে পারে।

অর্থ পাচারের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির সফল বাস্তবায়ন অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে, যা মোটেই কাম্য নয়। বস্তুত দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে অর্থ পাচারের ঘটনাকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। আর তাই পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার পাশাপাশি ভবিষ্যতে দেশ থেকে যাতে অর্থ পাচার না হতে পারে, সে ব্যাপারে অর্থ পাচারসংক্রান্ত সাতটি সম্পৃক্ত অপরাধের অনুসন্ধান ও তদন্তের ক্ষেত্রে দুদকের ক্ষমতা থাকার বিষয়টি সময়ের দাবি।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments