Friday, March 24, 2023
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামঅর্থ আত্মসাৎ মামলার রায়: বিচারের দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে আনা জরুরি

অর্থ আত্মসাৎ মামলার রায়: বিচারের দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে আনা জরুরি

অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের এক মামলায় ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমিনসহ ৪৬ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে আসামিদের ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম এ রায় ঘোষণা করেন। উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ৩১ জুলাই রাজধানীর কলাবাগান থানায় রফিকুলসহ ডেসটিনির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়। দুই মামলায় মোট ৪ হাজার ১১৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়।

এরপর তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ৪ মে একটি মামলায় (ট্রি প্ল্যান্টেশন) রফিকুলসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেয় দুদক। অপর মামলায় (মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি) ৪৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়।

স্মর্তব্য যে, মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির নামে ডেসটিনি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ১ হাজার ৯০১ কোটি টাকা সংগ্রহ করে; যেখান থেকে ১ হাজার ৮৬১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলে দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে।

অপর মামলার চার্জশিটে বলা হয়, ২০০৮ সাল থেকে ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ২ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ২ হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়।

ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের প্রতারণায় দেশের লাখ লাখ বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যা বলাই বাহুল্য। শুধু তাই নয়, সঞ্চয়ের অর্থ খুইয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে দুঃসহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন অনেকে। রায়ে অবশ্য ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের অর্থ ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারপতির নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করতে সরকারকে নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।

তবে দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর পর প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে আত্মসাৎকৃত বিপুল অঙ্কের অর্থের কতটুকু আদায় করা সম্ভব হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ ইতোমধ্যে ডেসটিনির অনেক স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বিক্রিসহ বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগও রয়েছে অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম ও অন্যদের বিরুদ্ধে।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালতও বলেছেন, ডেসটিনির গ্রাহকদের অর্থ ফেরত পাওয়ার বিষয়টিই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। বস্তুত এ রায় যদি আরও আগে দেওয়া যেত, তাহলে হয়তো ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ কিছুটা হলেও রক্ষা করা সম্ভব হতো।

দ্রুত ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নাগরিকদের সংবিধানস্বীকৃত মৌলিক অধিকার। বিচার বিলম্বিত হওয়া অবিচারেরই নামান্তর। বিচারে দীর্ঘসূত্রতার অন্যতম কারণ হলো বিচারকের সংখ্যার অপ্রতুলতা। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় অনুসন্ধান ও একটি কার্যকর পদ্ধতি উদ্ভাবন করা সময়ের দাবি। মামলার নথি যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ ও বিলম্বের কারণ উদঘাটন এবং তা প্রতিকারের উপায়ও উদ্ভাবন করা জরুরি।

অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, সরকারি কোষাগার থেকে বাড়তি কোনো অর্থ ব্যয় না করেও বিচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তিনটি পক্ষ যথাক্রমে বিচারক, আইনজীবী ও আদালতের কর্মচারীদের উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে মোকদ্দমার দ্রুত নিষ্পত্তি সম্ভব। আদালত ব্যবস্থাপনা ও মামলা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আরও কার্যকর পদ্ধতি অনুসরণ করে ক্ষতিগ্রস্তদের ‘টোটাল জাস্টিস’ দেওয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে, এটাই কাম্য। আমরা আশা করব, অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের মামলার এ রায় বিভিন্ন মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির প্রতারণা রোধে সহায়ক হবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments