Sunday, March 26, 2023
spot_img
Homeধর্মঅমুসলিমদের সঙ্গে মুমিনের সামাজিক সম্পর্ক

অমুসলিমদের সঙ্গে মুমিনের সামাজিক সম্পর্ক

ইসলাম ও মুসলমানের সঙ্গে শত্রুতায় লিপ্ত নয়—এমন অমুসলিমদের সঙ্গে স্বাভাবিক সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখার অনুমতি ইসলামী শরিয়ত দিয়েছে। যেমন প্রতিবেশী হিসেবে সুখে-দুঃখে তাদের পাশে থাকা, দুর্দিনে সহযোগিতা করা ইত্যাদি। আনাস (রা.) বলেন, এক ইহুদি বালক নবী (সা.)-এর খিদমত করত। সে একবার অসুস্থ হয়ে পড়লে নবী (সা.) তাকে দেখতে এলেন।

তিনি তার মাথার কাছে বসে তাকে বললেন, তুমি ইসলাম গ্রহণ কোরো। সে তখন তার পিতার দিকে তাকাল। তিনি তার নিকটেই ছিলেন। পিতা বললেন, আবুল কাসেমের কথা মেনে নাও। অতঃপর সে ইসলাম গ্রহণ করল। নবী (সা.) সেখান থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় বললেন, যাবতীয় প্রশংসা সে আল্লাহর, যিনি তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৩৫৬)

উল্লিখিত হাদিসের আলোকে আলেমরা বলেন, অমুসলিমদের সঙ্গে সামাজিক সম্পর্কের ভিত্তি দ্বিনি কল্যাণ হওয়া উত্তম। রাসুলুল্লাহ (সা.) অমুসলিমদের সঙ্গে সামাজিক সম্পর্ক রক্ষা করেননি; বরং বহু ক্ষেত্রে তিনি ধৈর্য, শালীনতা ও সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। আয়েশা (রা.) বলেন, একবার একদল ইহুদি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বলল, (আস-সালামু আলাইকা-এর পরিবর্তে) আসসামু আলাইকা (তোমার মরণ হোক)। আমি এই কথার অর্থ বুঝে বললাম, আলাইকুমুস সামু ওয়াল লানাতু (তোমাদের ওপর মৃত্যু ও অভিশাপ)। নবী (সা.) বললেন, হে আয়েশা, তুমি থামো। আল্লাহ সর্বাবস্থায় নম্রতা পছন্দ করেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, তারা যা বলল, তা কি আপনি শুনেননি? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, এ জন্য আমিও বলেছি, ওয়া আলাইকুম (তোমাদের ওপরও)। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬২৫৬)

শরিয়তের গণ্ডির মধ্যে থেকে অমুসলিমদের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন করার অনুমতিও দিয়েছে ইসলাম। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) একজন ইহুদির কাছ থেকে বাকিতে খাবার কিনেছিলেন এবং লোহার বর্ম তার কাছে বন্ধক রেখেছিলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২২৫১)

তবে যে পণ্য বা লেনদেন পদ্ধতি ইসলামী শরিয়তে বৈধ নয়, তা করা যাবে না। যেমন সুদি কারবার, মদ ও শূকরের লেনদেন ইত্যাদি। একইভাবে যেসব লেনদেন মুসলিমসমাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, তাও করা যাবে না। আল্লামা ইবনে বাত্তাল (রহ.) বলেন, অমুসলিমদের সঙ্গে সব ধরনের বেচাকেনা বৈধ। তবে শত্রু দেশের অমুসলিমদের কাছে সমরাস্ত্র বা এমন পণ্য বিক্রি করা যাবে না, যা মুসলিম উম্মাহকে ধ্বংসের কাজে ব্যবহৃত হয় এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে তাদের শক্তিশালী করে। (শরহু সহিহিল বুখারি : ৬/৩৩৮)

অমুসলিম দেশ থেকে খাদ্য, বস্ত্র, ওষুধসহ নিত্য প্রয়োজনীয় আমদানি করা এবং সেখানে পণ্য রপ্তানি করা বৈধ। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবদ্দশায় সাহাবায়ে কেরাম (রা.) শামসহ প্রতিবেশী অমুসলিম দেশগুলোকে বাণিজ্য কাফেলা পরিচালনা করেছিলেন, যা খোলাফায়ে রাশেদার যুগে আরো প্রসারিত হয়েছিল। তবে আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে মুসলিম দেশগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া উত্তম। (আল-মাসায়িলুল মারদিনিয়্যাহ, পৃষ্ঠা : ২৫১)

ইসলামী শরিয়ত জাকাত ছাড়া অন্য সব অনুদানে অমুসলিমদের শরিক করার অনুমতি দিয়েছে। শায়খ ইবনে উসাইমিন (রহ.) বলেন, অমুসলিমদের দান করা বৈধ, যদি না তারা মুসলমানের সঙ্গে শত্রুতায় লিপ্ত না থাকে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণ হয় অথবা তারা মুসলমানের চুক্তিবদ্ধ থাকে। (ফাতাওয়া নুর আরাদ-দারবি : ১৫/৩৮১)

তবে দান-অনুদানের ক্ষেত্রেও মুসলিমরা অমুসলিমদের ওপর প্রাধান্য পাবে।

আল-মাউসুয়াতুল আকাদিয়া

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments