Monday, March 20, 2023
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামঅব্যাহত গ্যাস সংকট

অব্যাহত গ্যাস সংকট

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্যাস সংকট দিন দিন তীব্র হওয়ার সংবাদ উদ্বেগজনক। গ্যাস সংকটের প্রভাব আবাসিক, সিএনজি থেকে শিল্প-সবখানেই পড়েছে।

তীব্র গ্যাস সংকটে শিল্প অধ্যুষিত গাজীপুরের শিল্প-কারখানায় উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। সেখানে প্রতি বর্গফুটে ১৫ পিএসআই গ্যাসের চাপ থাকার কথা থাকলেও অনেক কারখানায় তা নেমে এসেছে মাত্র দুই-তিন মাত্রায়। আবার কোনো কোনো কারখানায় তা শূন্যতে নেমে এসেছে।

এতে উৎপাদন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হওয়ায় কারখানাগুলোর আর্থিক লোকসানের মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে; শুধু তাই নয়, বায়ারদের চাহিদামতো শিপমেন্ট সরবরাহ করতে না পারলে ক্রয়াদেশ বাতিল হতে পারে এবং এ কারণে ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে অন্য কোনো দেশের দিকে ঝুঁকে পড়লে তা বাংলাদেশের জন্য আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে, যা কোনোমতেই কাম্য নয়।

গ্যাস সংকট অব্যাহত থাকলে জনদুর্ভোগের পাশাপাশি দেশের অনেক শিল্প-কারখানায় বিপর্যয় নেমে আসবে এবং এর ফলে রপ্তানি খাত অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে, যা অনভিপ্রেত। এমনিতেই করোনার কারণে দীর্ঘদিন কারখানা বন্ধ ছিল। বন্ধ থাকাকালীন গ্যাসের বিল বা জরিমানাও মওকুফ হয়নি। এরপরও মালিকরা ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। দেশে দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগ পরিস্থিতি ভালো নয়। এখনো গ্যাস-বিদ্যুৎ পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়নি। এ কারণে অনেক উদ্যোক্তা বিনিয়োগ করেও উৎপাদনে আসতে পারছেন না। অন্যদিকে নতুন বিনিয়োগেও আগ্রহী হচ্ছেন না উদ্যোক্তারা।

অভিযোগ রয়েছে, দেশে পর্যাপ্ত গ্যাস মজুত থাকলেও তা উত্তোলনে নেওয়া হচ্ছে না কার্যকর উদ্যোগ। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এটি দেশের গ্যাস খাত নিয়ে ষড়যন্ত্র এবং এর মধ্য দিয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা গ্যাসের নিয়ন্ত্রণ দেশি-বিদেশি চক্রের হাতে তুলে দিতে চায়। বস্তুত দেশে জ্বালানি খাত নিয়ে এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা চলছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের শিল্প খাত ধ্বংস হয়ে যাবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। দুঃখজনক হলো, বিশ্বের অনেক দেশেই বিনিয়োগ উৎসাহিত করার জন্য উদ্যোক্তাদের নানারকম সুযোগ-সুবিধা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হলেও দেশে এর উলটো চিত্রই পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা মেনে নেওয়া যায় না।

গ্যাস সংকট নিরসনে গড়িমসি করলে জনদুর্ভোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে স্থবিরতা নেমে আসবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর অনাবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্র পড়ে থাকলেও নোয়াখালীর সুন্দলপুরে মাঝারি মানের একটি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার ছাড়া উল্লেখ করার মতো কোনো সাফল্য নেই। গ্যাস সংকট নিরসনে উৎপাদন বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই-তা বলাই বাহুল্য। অবশ্য চাহিদার তুলনায় কম উৎপাদনই একমাত্র সমস্যা নয়। আমাদের সঞ্চালন লাইনেও সমস্যা রয়েছে। জাতীয় সরবরাহ লাইন ত্রুটিপূর্ণ হওয়ার কারণে উত্তোলিত গ্যাস অনেক সময় শিল্প-কারখানায় পৌঁছানো সম্ভব হয় না।

দেশে উৎপাদিত গ্যাসের উল্লেখযোগ্য অংশ সরবরাহ করা হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে। এছাড়া সার কারখানা, শিল্প প্রতিষ্ঠান, গৃহস্থালি (আবাসিক), সিএনজি এবং শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গ্যাস ব্যবহার করে। এ অবস্থায় গ্যাস খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এ বিষয়টি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) একটি প্রতিবেদনেও উঠে এসেছিল। প্রতিষ্ঠানটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে গ্যাস খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়ে বলেছিল, দেশে গ্যাসের চাহিদার সঙ্গে উৎপাদনের বিস্তর ফারাক রয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিধারা নিরবচ্ছিন্ন রাখতে গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহ ব্যবস্থা ত্রুটিহীন রেখে এর দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা প্রয়োজন। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে সরকার গ্যাস সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি এ খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments