দোনারচরবাসীকে জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার করুন
অবৈধ দখলদারদের অবিবেচনাপ্রসূত কর্মকাণ্ডে কুমিল্লার দাউদকান্দির দোনারচরে কয়েকশ পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে। জানা গেছে, চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি দখলদাররা অবরুদ্ধ করায় স্থানীয় বাসিন্দারা নদীপথে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন। শুধু তাই নয়, এলাকার কৃষকরা যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে শস্যপণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না।
উপরন্তু রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়ায় ইতোমধ্যে দোনারচরের কমপক্ষে ৩০০ একর জমি পতিত (অনাবাদি) হয়ে পড়েছে। ২০২০ সালের ২৩ আগস্ট দাউদকান্দির তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কাছে এ সংক্রান্ত যে প্রতিবেদনটি জমা দিয়েছিলেন, সেখানে দোনারচর এলাকাবাসীকে অধুনালুপ্ত ছিটমহলবাসীর সঙ্গে তুলনা করে বলা হয়েছিল, দোনারচরবাসীর ক্ষেত্রে প্রচলিত আইন ও মানবাধিকার কোনোটাই মানা হয়নি। এতে ওই এলাকার কৃষি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। আটকে পড়া এলাকাবাসী বর্ষা মৌসুমে ছিটমহলের মতো সম্পূর্ণভাবে অবরুদ্ধ হয়ে মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয়দের কাছ থেকে কম দামে জমি কিনে নেওয়ার উদ্দেশ্যেই রাস্তা বন্ধ করার মতো এমন অমানবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক।
আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, প্রভাবশালীরা গোমতী নদীর কিছু অংশ অবৈধভাবে দখল করে যে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করেছে, সেটির শিল্পবর্জ্য নদীর পানি দূষিত করছে। নদী দখল ও দূষণকারীরা যত বড় প্রভাবশালীই হোক, আইন অনুযায়ী তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে ভবিষ্যতে নদী দখল ও দূষণ রোধসহ পরিবেশ রক্ষায় এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এক্ষেত্রে দাউদকান্দির তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রতিবেদনে যে পাঁচ দফা সুপারিশ রেখেছিলেন, তা প্রণিধানযোগ্য। সুপারিশে তিনি ৩০০ একর জমি চাষাবাদের প্রয়োজনে কৃষকের চলাচলের জন্য অবৈধভাবে বন্ধ রাখা রাস্তাটি খুলে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। আমরা তার সঙ্গে সহমত পোষণ করি। দোনারচরে যেভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে চলেছে, তা নিরসনে সরকারকে অবশ্যই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে অপরাধী ও সমাজবিরোধীরা যে বেপরোয়া হয়ে উঠবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। মনে রাখতে হবে-দুষ্টের দমন, শিষ্টের প্রতিপালন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হলে রাষ্ট্রের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা বিনষ্ট হতে বাধ্য। স্বাধীন দেশে এ রকম অবস্থা যাতে সৃষ্টি না হয়, সেজন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এটাই প্রত্যাশা।