অপরিশোধিত তেলের উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাশিয়া। ধারণা করা হচ্ছে, মস্কোর ওপর পশ্চিমা দেশগুলোর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। দেশটি জানিয়েছে, আগামী মার্চ মাস থেকে দৈনিক তেল উৎপাদন পাঁচ লাখ ব্যারেল পর্যন্ত কমিয়ে দেয়া হবে। গত ডিসেম্বর মাসে রুশ তেলের মূল্য নির্ধারণ করে দেয় পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো। তারা সিদ্ধান্ত নেয় রাশিয়া থেকে আমদানি করা তেলের দাম বাজারমূল্যের তুলনায় ব্যারেলপ্রতি ৫ ডলার কম হবে। তবে রাশিয়া এর জবাবে জানিয়েছিল, যেসব দেশ তাদের তেলের দাম নির্ধারণ করে দেবে তাদের কাছে তেল বিক্রি করা হবে না। এ খবর দিয়েছে সিএনএন।
খবরে জানানো হয়, নতুন এই সিদ্ধান্তের ফলে রাশিয়ার তেল উৎপাদন শতকরা ৫ শতাংশ কমে যাবে। এই ঘোষণার পরই বাজারে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ২.৭ শতাংশ বেড়ে গেছে। শুক্রবার সকালে এই তেলের দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি ৮৬ ডলার। রাশিয়া তেল উৎপাদন কমিয়ে দিলে বিশ্ব বাজারে আবারও জ্বালানি সংকট সৃষ্টি হতে পারে এমন আশঙ্কাও রয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রাশিয়া তার তেল উৎপাদন হ্রাসের সিদ্ধান্ত নিতে ওপেক প্লাসের সঙ্গে আলোচনা করেনি। এই জোটের সদস্য সৌদি আরবও। গত অক্টোবর মাসেই ওপেক প্লাস সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে তারা দৈনিক তেল উৎপাদন ২ মিলিয়ন ব্যারেল কমিয়ে দেবে। যদিও সেই সিদ্ধান্ত এতদিনেও কার্যকর হয়নি।
শুক্রবার রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমরা তাদের কাছে তেল বিক্রি করব না যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমাদের তেলের উপরে দাম নির্ধারণ করে দেবে। রাশিয়া স্বেচ্ছায় মার্চ মাসে প্রতিদিন ৫ লাখ ব্যারেল তেল কম উৎপাদন করবে। এটি বাজার পুনরুদ্ধারে ভূমিকা রাখবে। এর আগে গত বছরের জুনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন রুশ তেল আমদানি বন্ধে একমত হয়। রাশিয়া যাতে ইউক্রেন যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার মতো বিদেশি মুদ্রা না পায় সে জন্য ৬ মাসের মধ্যে দেশটির সমুদ্রজাত তেল আমদানি বন্ধে সম্মত হয় জোটটি। এরপর ডিসেম্বর মাসে জি-৭ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো রাশিয়া থেকে তেল আমদানির ক্ষেত্রে মূল্য বেঁধে দেয়। তবে রাশিয়া জানিয়েছে, পশ্চিমাদের এমন সিদ্ধান্তে তাদের তেল রপ্তানিতে বড় কোনো প্রভাব পড়বে না।
নোভাক হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, রাশিয়ার তেলের ওপরে দাম বেঁধে দেয়া হলে তা এই খাতে বিনিয়োগ হ্রাস করবে এবং তার ধারাবাহিকতায় বিশ্বজুড়ে জ্বালানি সংকট সৃষ্টি হবে। গত কয়েক মাস ধরে চীন এবং ভারত রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল আমদানি করে চলেছে। দীর্ঘদিন লকডাউন চলার পর চীনের অর্থনীতি পুনরায় চালু হচ্ছে। ফলে দেশটির তেলের চাহিদা আগের তুলনায় আরও বৃদ্ধি পাবে। এমন সময় রাশিয়ার তেল উৎপাদন হ্রাসের ঘোষণা বিশ্ব বাজারে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। গত মাসে, ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি চাহিদা প্রতিদিন প্রায় ২ মিলিয়ন ব্যারেল বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতিহাসের যে কোনো সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ তেলের চাহিদা সৃষ্টি হতে পারে শীগগিরই।