এই দাম বেঁধে দেওয়ার অর্থ কী?
রমজানে পণ্যমূল্য কমাতে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সম্প্রতি সবজি, মাছ-মাংস ও মসলাজাতীয় পণ্যসহ ২৯ পণ্যের দাম বেঁধে দেয়। শনিবার থেকে এ মূল্য কার্যকরের কথা থাকলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। রোববার যুগান্তরে খবরে প্রকাশ, বাজার তদারকির অভাবে এ নির্দেশনা কাজে দিচ্ছে না। পরিস্থিতি দেখে মনে হবে যেন সরকারের এ নির্দেশ কাগজেকলমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। ফলে মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও ক্রেতার কোনো লাভ হয়নি। বরং অসাধু ব্যবসায়ীরা সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বাড়তি দরেই পণ্য বিক্রি করছে। এদিকে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সূত্র বলছে, কৃষি বিপণন আইন-২০১৮-এর ৪(ঝ) ধারার ক্ষমতাবলে কৃষিপণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্ধারিত দামে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করবে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। সেক্ষেত্রে আইন যে বাস্তবায়ন হচ্ছে না, তা স্পষ্টই দৃশ্যমান। বস্তুত কয়েক বছর ধরেই নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা লক্ষ করা যাচ্ছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, ঠুনকো অজুহাতে অসাধু ব্যবসায়ীরা একেক সময় একেক পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে দিলেও তাতে লাগাম টানতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
প্রশ্ন হচ্ছে, সরকারের নির্দেশনা সত্ত্বেও কেন বাজারে এর প্রতিফলন নেই? ব্যবসায়ীরা অতিমুনাফার আশায় আদেশ লঙ্ঘন করছেন; কিন্তু এজন্য বাজার মনিটরিং এবং আইন অমান্যকারী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন? স্বাভাবিকভাবেই এর দায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর ওপরই পড়ে। মনে রাখতে হবে, স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব যথাযথ পালন করা না হলে জবাবদিহির আওতায় তারাও পড়েন। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাজারে নিত্যপণ্যের লাগামছাড়া দামে ক্রেতারা প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন। চাল, ডাল, তেল, ব্রয়লার মুরগি, চিনি, লবণ, আটা-ময়দা-সব পণ্যই বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। মাছ-মাংস, সব ধরনের সবজি, আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম তো লাগামছাড়া। বিশেষ করে ইফতারসংশ্লিষ্ট পণ্যের দাম কারণ ছাড়াই বৃদ্ধি পেয়েছে। স্পষ্টতই সিন্ডিকেটের কারসাজিতে পণ্যের দাম হুহু করে বাড়লেও বাজার মনিটরিংয়ের অভাব স্পষ্ট।
মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ব্যয় বাড়লেও আয়ের ক্ষেত্রে যদি সামঞ্জস্য থাকত, তাহলে এ সমস্যা ভয়াবহ রূপ নিত না। বাস্তবতা হচ্ছে, ব্যয় বাড়লেও আয় বাড়েনি। ফলে মানুষ টিকে থাকার জন্য সঞ্চয় ভেঙে অথবা ঋণ করে খাচ্ছে। কিন্তু যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করেন, তাদের সঞ্চয়ও নেই, তাদের কেউ ঋণও দেয় না। এ অবস্থায় তারা পড়েছেন সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে। আমরা মনে করি, বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য শুধু পণ্যের দাম বেঁধে দিলেই হবে না। সেই দামে পণ্যটি বাজারে বিক্রি হচ্ছে কি না, তাও যাচাই করতে হবে। যদি সেই দামে বিক্রেতারা পণ্য বিক্রি না করেন, তাহলে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছে জবাবদিহি করতে হবে। তা না হলে বরাবরের মতোই বেঁধে দেওয়া দাম কাগজেকলমেই উল্লেখ থাকবে, বাস্তবে ভোক্তা প্রতারিতই হবেন। বাজার ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিতদের জবাবদিহির আওতায় আনার পাশাপাশি কারসাজিতে জড়িতদের চিহ্নিত করে সরকার আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে, এটাই কাম্য।