কর্মচারীরা পাচ্ছেন এমফিল ও পিএইচডি ভাতা
কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের অন্যতম বিদ্যাপীঠ ওয়ালী নেওয়াজ খান কলেজ। ২০২০ সালের ২২শে জুন প্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন প্রফেসর মো. আল-আমিন। যোগদানের পর মাত্র ২ বছরেই ‘অনিয়মের অধ্যক্ষ’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন তিনি। অবৈধভাবে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ, সরকারি পে-স্কেল লঙ্ঘন করে অবৈধ মনগড়া বেতন কাঠামো তৈরি করে অর্থ আত্মসাৎ, উপবৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন আদায়, অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা না নিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, কলেজের এফডিআর’র টাকা উত্তোলনসহ অসংখ্য অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এমনকি নিজের অনিয়ম জায়েজ করতে কলেজের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদেরও উচ্চ শিক্ষা ইনক্রিমেন্ট হিসেবে দিচ্ছেন পিএইচডি ও এমফিল ভাতা। অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আল-আমিনের বিরুদ্ধে এমন সুনির্দিষ্ট ১২টি অনিয়মের বিষয় উল্লেখ করে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম বাবু সম্প্রতি কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম গত ২রা আগস্ট ৩ সদস্যবিশিষ্ট অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছেন।
অনুসন্ধান কমিটিতে কিশোরগঞ্জের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালককে আহ্বায়ক এবং জেলা শিক্ষা অফিসার ও জেলা অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফিন্যান্স অফিসারকে সদস্য করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগে অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আল-আমিনের ক্ষমতার অপব্যবহার, অসৎ উদ্দেশ্যে প্রতারণা, জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া নিয়োগ ও কাল্পনিক ভাউচার তৈরি, পে-স্কেল-২০১৫ লঙ্ঘন করে মনগড়া বেতন কাঠামো তৈরিকরণ এবং পিপিআর-২০০৮ উপেক্ষা করে উন্নয়ন কার্যক্রম করার ব্যাপারে তদন্ত অনুসন্ধানের আবেদন জানানো হয়। অভিযোগে বলা হয়, ১৯৮২ সালে স্থাপিত ১৫টি বিষয়ে অনার্স ও এমবিএ প্রফেশনাল সমৃদ্ধ ঐতিহ্যবাহী ওয়ালী নেওয়াজ খান কলেজে এইচএসসি, বিএম শাখা, ডিগ্রি (জাতীয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়) কোর্সে বর্তমানে প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। যাদের প্রায় ৮০ ভাগ শিক্ষার্থীই দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান।
তাদের কষ্টার্জিত টাকা অধ্যক্ষ সরকারি পরিপত্র বহির্ভূতভাবে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে আদায় করছেন এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আত্মসাৎ করছেন। অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে, এডহক কমিটির মাধ্যমে অন্যায়ভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সরকারি পে-স্কেল-২০১৫ লঙ্ঘন করে অবৈধ মনগড়া বেতন কাঠামো তৈরি করে ৯ মাসে কলেজ তহবিলের লাখ লাখ টাকা লোপাট করা হয়েছে। নন-এমপিও শিক্ষকদের চলমান ইনক্রিমেন্ট কর্তন, এমপিও শিক্ষকদের এমপিও নীতিমালা বহির্ভূত মূল বেতন বৃদ্ধি করে বেতন তৈরি এবং অফিস কর্মচারীদের এমফিল ও পিএইচডি ভাতা প্রদান করা হয়েছে।
এরমধ্যে উচ্চ শিক্ষা ইনক্রিমেন্ট এমফিল ও পিএইচডি ভাতা হিসেবে নন-এমপিও অফিস সহকারী মো. শফিউজ্জামান আকন্দকে ১৬৫৬ টাকা এবং অফিস সহকারী জুলহাস উদ্দিনকে ১৪৫৪ টাকা দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বিশেষ ভাতা ও সার্ভিস ভাতাসহ নানা খাত দেখিয়ে অর্থ লোপাট করা হচ্ছে। কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে প্রফেসর মো. আল-আমিন যোগদানের পর থেকে দ্বৈত সাধারণ হিসাব (রূপালী ব্যাংক, কিশোরগঞ্জ ও এনআরবিসি ব্যাংক কিশোরগঞ্জ) পরিচালনা করেন যাতে কলেজের আয়-ব্যয়ের হিসাব যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ। উপবৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে সরকারি পরিপত্র ব্যতীত বেতন আদায় এবং উপবৃত্তি সংক্রান্ত কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ। শিক্ষক পরিষদকে উপেক্ষা করে অধ্যক্ষ ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার আশায় অবৈধ বণ্টন নীতিমালা তৈরি করে লাখ লাখ টাকা লুট করেন। অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা (এইচএসসি-২০২০) না নিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেন।
কলেজের এফডিআর (ন্যাশনাল ব্যাংক, কিশোরগঞ্জ) আনুমানিক ৬৫ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। যোগদানের পর থেকে এমপিওভুক্তির পূর্ব পর্যন্ত এমপিও’র সরকারি টাকা ও কলেজ প্রদত্ত বেতন উভয় টাকাই কলেজ তহবিল থেকে উত্তোলন করেন যা এমপিওভুক্তির পরও কলেজপ্রদত্ত টাকা ফেরৎ প্রদান করেননি। অধ্যক্ষের মদতপুষ্ট শিক্ষকদের মাধ্যমে কলেজের প্রশাসনিক বাজেট তৈরি করেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে অধ্যক্ষ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিলাসী শয়নকক্ষ নির্মাণ করেন। সভাপতির অসুস্থতার অযুহাত দেখিয়ে তার স্বাক্ষর জাল করে কলেজের অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন বলে কলেজে প্রচলিত রয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষ কৃত্রিম আর্থিক সংকট সৃষ্টি করে শিক্ষক-কর্মচারীদের ৪ মাসের বেতন-ভাতাদি পরিশোধে টালবাহানা করছেন। অভিযোগের ব্যাপারে ওয়ালী নেওয়াজ খান কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আল-আমিন বলেন, অনুমোদিত স্কেলে বেতন-ভাতা নেয়া হচ্ছে। স্কেলের চেয়ে বেশি আমি কীভাবে নিবো? বাজেট অনুমোদন হয়েছে, পরিচালনা পর্ষদ অনুমোদন দিয়েছে, সবকিছুই অনুমোদিত।