তদারকি কার্যক্রম শক্তিশালী করা প্রয়োজন
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ হিসাবে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে প্রায়ই আন্তর্জাতিক বাজারের পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কথা বলা হয়। সরকারের কর্তাব্যক্তিরাও দেখান এমন অজুহাত। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কয়েকটি নিত্যপণ্যের মূল্যে উন্নত দেশগুলোকেও ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ।
যেমন-দেশে ভোজ্যতেল, ডিম ও পেঁয়াজের যে দাম, তা ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে এসব পণ্য যে দামে বিক্রি হয়, তার চেয়েও বেশি। বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বাড়লে দেশের ব্যবসায়ীরা এর সুযোগ নেন; তারা আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে বিভিন্ন পণ্যের দাম এতটাই বাড়িয়ে দেন, যা বাস্তবসম্মত নয়। পণ্যের বাজার অস্থির করার ক্ষেত্রে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির বিষয়টি বহুল আলোচিত। মূলত বাজারে সরকারের দুর্বল তদারকি এজন্য দায়ী।
মানুষের আয়ের সঙ্গে মিলিয়ে কয়েকটি পণ্যের তুলনামূলক পর্যালোচনা করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ঢাকায় একজন মানুষের মাসিক গড় আয় ১৪৯ মার্কিন ডলার। এখানে এক লিটার দুধের দাম ৮০ টাকা, এক ডজন ডিম ১১০ টাকা এবং এক কেজি পেঁয়াজের দাম ৫৫ টাকা। চেক রিপাবলিকের অস্ট্রাবা শহরে মানুষের গড় আয় ১৩৩১ ডলার। সেখানে প্রতি লিটার দুধের দাম ৬২ টাকা। স্পেনের মালাগা শহরে মানুষের গড় আয় ২২২৭ ডলার। সেখানে দুধের লিটার ৬২ টাকা। আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও রাজ্যের একটি শহরে নাগরিকের মাসিক গড় আয় ৩৯৫৫ ডলার। অথচ সেখানে এক ডজন ডিমের দাম ১০৩ টাকা। মালয়েশিয়ার একটি শহরে মানুষের গড় আয় ৬৬৯ ডলার। সেখানে প্রতি ডজন ডিমের দাম ৮৫ টাকা। সার্বিয়ার এক শহরে একজনের মাসিক গড় আয় ৩৩৫ ডলার।
সেখানে এক কেজি পেঁয়াজের দাম ৪০ টাকা। অর্থাৎ আয় অনেক বেশি হলেও সেসব দেশে উল্লিখিত পণ্যের দাম আমাদের চেয়ে কম। সিপিডির গবেষণায় দেখা গেছে, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের চেয়ে বাংলাদেশে চালের দাম বেশি। অথচ এসব দেশের তুলনায় বাংলাদেশে চালের উৎপাদন বেশি। এছাড়া আরও কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম অন্যান্য দেশের বাজারের চেয়ে ঢাকার বাজারে বেশি।
সিপিডির গবেষণায় এটা স্পষ্ট যে, এখানে বাজার ব্যবস্থাপনায় সমস্যা বিদ্যমান। এক্ষেত্রে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এ জায়গাটিতে সরকারের জরুরি ভিত্তিতে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। বাজার তদারকি কার্যক্রম শক্তিশালী করতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। পণ্যের সরবরাহ যাতে যথেষ্ট থাকে সে ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। একচেটিয়া প্রভাব খাটিয়ে বা পণ্যের অবৈধ মজুতের মাধ্যমে কেউ যাতে কোনো পণ্যের বাজার অস্থির করতে না পারে, সে জন্য নিতে হবে যথাযথ পদক্ষেপ। আমরা জানি, যে কোনো সংকটে অসাধু ব্যবসায়ীদের চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারা যাতে অসাধু পন্থা অবলম্বনের সুযোগ না পায়, সে জন্য আগে থেকেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। অতীতে আমরা দেখেছি, রমজান মাসে যেসব পণ্যের চাহিদা বাড়ে; আমদানিকারক ও বিক্রেতারা কারসাজি করে সেসব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। এবার যাতে তেমনটি না ঘটে সে জন্য এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ইতোমধ্যে যারা কারসাজি করে চাল, ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া না হলে বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের জন্য কঠিন হবে।