Friday, March 29, 2024
spot_img
Homeবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিঅডিও-ভিডিও সরাতে ফেসবুক ইউটিউবকে বাংলাদেশের সরকার কি বাধ্য করতে পারে?

অডিও-ভিডিও সরাতে ফেসবুক ইউটিউবকে বাংলাদেশের সরকার কি বাধ্য করতে পারে?

সদ্য পদত্যাগ করা তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ মুরাদ হাসানের অশালীন বক্তব্যের অডিও-ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে অপসারণ করার জন্য বিটিআরসিকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশের হাইকোর্ট। এসব অডিও-ভিডিও সরাতে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, বুধবারের মধ্যে সেটি উচ্চ আদালতকে জানানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন মঙ্গলবার হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে এসব অশালীন অডিও-ভিডিও সরানোর আবেদন করলে হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই আদেশ দেন।

ফেসবুক লাইভে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কন্যার উদ্দেশ্যে মুরাদ হাসানের নারী-বিদ্বেষী ও বর্ণবাদী মন্তব্য এবং ফাঁস হওয়া টেলিফোন কথোপকথনে একজন চিত্রনায়িকার সাথে তার অশালীন ও অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলা নিয়ে প্রচণ্ড সমালোচনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করতে বলেন মুরাদ হাসানকে।

এর একদিন পরই মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম থেকে ই-মেইল যোগে পদত্যাগপত্র পাঠান হাসান।

কিন্তু যেখানে বেশিরভাগ সামাজিক মাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের বাইরে থেকে পরিচালিত হয়, সেক্ষেত্রে এসব কনটেন্ট কীভাবে, কতটুকু সরানো সম্ভব?

যা বলছে বিটিআরসি
বাংলাদেশে ইন্টারনেট এবং সামাজিক মাধ্যম তদারক করে থাকে টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন বা বিটিআরসি। কিন্তু ফেসবুক, ইউটিউব বা অন্য সামাজিক মাধ্যমগুলো বাংলাদেশের বাইরে থেকে পরিচালিত হওয়ায় সরাসরি এই প্রতিষ্ঠানটি তাদের কনটেন্টের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারে না।

বাংলাদেশের বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর শিকদার বলছেন, আমার যেটুক চেক করেছি, আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী, ফেসবুক কিছু কনটেন্ট এর মধ্যেই সরিয়ে নিয়েছে। বাকি যা আছে, সেগুলোও আমরা পরীক্ষা করে দেখছি।

আপত্তিকর কনটেন্ট থাকলে বিটিআরসির পক্ষ থেকে সেগুলো সরিয়ে নেয়ার অনুরোধ করা হয়। তখন সামাজিক মাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো সেই অনুরোধ যাচাই বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।

শ্যাম সুন্দর শিকদার জানান, ফেসবুকের সঙ্গে বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষের যে সমঝোতা রয়েছে, সেই অনুযায়ী আপত্তিকর কনটেন্ট সম্পর্কে অভিযোগ জানানো হলে ফেসবুক সাধারণত ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের যেসব অডিও বা ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, সেগুলো এর মধ্যেই শনাক্ত করার ব্যাপারে বিটিআরসি কাজ শুরু করেছে বলে তিনি জানান।

‘আমরা ইন্টারনালি কাজ শুরু করে দিয়েছি। যেসব কনটেন্ট আপত্তিকর, সেগুলো সরাতে তাদের আমরা অনুরোধ করবো,’শিকদার বলছেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কন্যার উদ্দেশ্যে অশালীন ও বর্ণবাদী মন্তব্য এবং একজন চিত্রনায়িকার সঙ্গে যে টেলিফোন কথোপকথন ফাঁস হয়েছে, সেসব অডিও-ভিডিও, ফেসবুক ও ইউটিউবে এর মধ্যেই লাখ লাখ বার দেখা হয়েছে। কয়েক হাজার বার শেয়ার হয়েছে এসব অডিও-ভিডিও।

বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর শিকদার বলছেন, ফেসবুক বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষের অনুরোধ সহজে রাখলেও এখনো ইউটিউব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সেই সম্পর্ক হয়নি। অনেক সময় অনেক অনুরোধ তারা রাখে না। ‘আমরা চেষ্টা করছি, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অথবা আইনি ভাবে হলেও, তারা যেন এসব বিষয়ে আরও ভালোভাবে ব্যবস্থা নেয়,’ তিনি বলছেন।

সরকার কি সামাজিক মাধ্যমগুলোকে বাধ্য করতে পারে?

বাংলাদেশের একজন প্রযুক্তিবিদ ও সাইবার বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির বলছেন, এসব প্রতিষ্ঠান বিশ্ব জুড়েই স্বাধীনতা ভোগ করে, তাদের বাধ্য করার সুযোগ নেই, কোনো দেশই তাদের বাধ্য করতে পারে না।

‘তবে এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাংলাদেশের এক ধরনের যোগাযোগ আছে। সেই অনুযায়ী তারা (বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ) বিভিন্ন সময় অনুরোধ জানান। তখন ফেসবুক বা ইউটিউব তাদের নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা সেসব অনুরোধ শোনে,’ তিনি বলছেন।

আরেকটি ব্যবস্থা হতে পারে, যদি বিশেষ কোনো কনটেন্ট বা আইডির ব্যাপারে এক সঙ্গে অনেক মানুষ রিপোর্ট করে, তখন এসব প্রতিষ্ঠান ওই কনটেন্টের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে, তিনি জানান।

‘কিন্তু প্রযুক্তি দিয়ে শুধুমাত্র বিশেষ কনটেন্ট, অডিও বা ভিডিও ব্লক করার কোন সুযোগ নেই। হয়তো পুরো ফেসবুক বা ইউটিউব ব্লক করা যায়, কিন্তু শুধু বিশেষ কোন কনটেন্ট আটকানো যায় না,’ বলেন সাইবার বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির।

এরা যেহেতু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, কোন সামাজিক চাপ থাকলে সেটা তারা বিবেচনা করে। তবে কত দ্রুত এসব কনটেন্ট সরানো যাবে, সেটা নির্ভর করে কনটেন্ট কতটা ছড়িয়ে গেছে, তার ওপরে, বলছেন মি. আহমেদ।

তিনি একটি উদাহরণ দিয়ে বলেন, নিউজিল্যান্ডে যখন ২০১৯ সালে ক্রাইস্ট-চার্চে হামলা করে ৪২ জনকে হত্যা করা হয়েছিল, সেই ভিডিও সরাসরি সম্প্রচার করেছিল হামলাকারী। কিন্তু পরবর্তীতে নিউজিল্যান্ড সরকার সেসব অডিও-ভিডিও সরিয়ে ফেলার অনুরোধ জানানোর পর সামাজিক মাধ্যমগুলো তা সরিয়ে দিয়েছিল।

সূত্র : বিবিসি

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments